ট্রাম্প প্রার্থী হতে অযোগ্য নন, ইঙ্গিত সুপ্রিম কোর্টের
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রার্থী হতে পারবেন—এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। ট্রাম্পকে নির্বাচনে নিষিদ্ধ করে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার তাঁরা এ ইঙ্গিত দেন।
শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতির বেশির ভাগ ইঙ্গিত দেন, ট্রাম্প আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে কলোরাডো সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বাতিলের পক্ষে তাঁরা।
টানা দুই ঘণ্টার শুনানিতে রক্ষণশীল ও উদারপন্থী—সুপ্রিম কোর্টের দুই ঘরানার বিচারপতিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে প্রার্থী হতে পারবেন আর কে পারবেন না, সেই সিদ্ধান্ত কোনো একটি রাজ্য নিতে পারে না।
আগামী মাসের শুরুতে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকানদের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে (প্রাইমারি) অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প অযোগ্য কি না, এমন প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্ট গতকাল এই শুনানি গ্রহণ করেন। মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে হামলায় ট্রাম্প জড়িত থাকার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, এমন অভিযোগে তাঁকে প্রাইমারিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করেন কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে ওই হামলা করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী উদ্ধৃত করে গত ডিসেম্বরে কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, ক্যাপিটলে বিদ্রোহে ট্রাম্পের যে ভূমিকা, এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।
তবে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি শুরু হওয়ার পর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুরুতে ট্রাম্পের আইনজীবী ও টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সাবেক সলিসিটর জেনারেল জোনাথন মিচেল বলেন, শুধু কংগ্রেসই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করার ক্ষমতা রাখে। জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘কলোরাডোর সুপ্রিম কোর্ট যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা ভুল এবং এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা উচিত।’
ট্রাম্পকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবিতে মামলাটি করেছিলেন কলোরাডোর কয়েকজন ভোটার। শুনানিতে তাঁদের আইনজীবী জেসন মুরে এর বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বলেন, সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর তৃতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ট্রাম্পকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।
মার্কিন সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি একবার সংবিধান সমুন্নত রাখা ও সুরক্ষার অঙ্গীকার করার পর বিদ্রোহে যুক্ত হলে তিনি সরকারি পদে থাকার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কলোরাডোর দেওয়া রায় বহাল রাখা হলে তার ‘পরিণতি হবে ভয়াবহ’। তিনি বলেন, ‘যদি কলোরাডোর রায় বহাল রাখা হয়, তাহলে অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকেও অযোগ্য ঘোষণা করে এমন রায় আসতে থাকবে। আমার ধারণা, বেশ কিছু রাজ্য থেকে বলা হবে, “ডেমোক্রেটদের প্রার্থী যিনিই হোন না কেন, তিনি নির্বাচনে থাকতে পারবেন না।”’
উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এলেনা ক্যাগান এবং আরও কয়েকজন বিচারপতির (যাঁদের তিনজনকে ট্রাম্প মনোনয়ন দিয়েছিলেন) কথা শুনেও মনে হয়, নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণাবিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি কোনো একটি রাজ্যের কাছে থাকা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মুরের উদ্দেশে বিচারপতি এলেনা ক্যাগান বলেন, ‘আমি মনে করি, আপনাকে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রে কে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন বা পারবেন না, সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার কেন একটি রাজ্যের থাকবে?’
এদিকে বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডায় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে নজর রাখছেন তিনি। আশা করছেন, তাঁর পক্ষেই রায় দেবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।