বেলুনের ধ্বংসাবশেষ চীনকে ফেরত দেওয়া হবে না: হোয়াইট হাউস
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় শনাক্ত হওয়ার পর যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা সন্দেহজনক চীনা গোয়েন্দা বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ চীনকে ফেরত দেওয়া হবে না। এই ধ্বংসাবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখবেন। সোমবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, সাগরের উপরিভাগ থেকে কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সাগরের তলদেশে অনুসন্ধান চালানো সম্ভব হয়নি। উদ্ধার হওয়া ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হবে। চীনকে ফেরত দেওয়া হবে না।
গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে গোয়েন্দা বেলুনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। চীনের এ বেলুন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেন্টাগনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আরও জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বেলুনটি গুলি করে ভূপাতিত করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তবে বেলুনটি যেসব এলাকার ওপর দিয়ে উড়ছিল, সেখানে বসবাসরত মানুষের ক্ষতি বিবেচনায় তা করা হয়নি।
এ ঘটনায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাঁর চীন সফর স্থগিত করেন। চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে গতকাল টেলিফোনে কথা বলেন ব্লিঙ্কেন। এ সময় ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুনের অনুপ্রবেশ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী কাজ।
‘বেলুনকাণ্ডের’ জেরে দুঃখ প্রকাশ করে চীন। দেশটির দাবি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো এ বেলুন বাতাসে ভেসে পথ ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি উড়ে যাওয়ার এ ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।
এই ঘটনায় কড়া অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগন জানায়, গত শনিবার এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করেছে তারা। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। পরবর্তীতে উত্তর আমেরিকার অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড ও ইউএস নর্দান কমান্ড জেনারেল গ্লেন ভ্যানহার্ক বলেন, মার্কিন নৌবাহিনী বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কোস্টগার্ড।
উত্তর আমেরিকার আকাশসীমায় শনাক্ত হওয়া সন্দেহজনক চীনা ‘নজরদারি বেলুন’ ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে নয়, লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার আকাশেও সন্দেহজনক চীনা গোয়েন্দা বেলুন শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। চীনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, এটা তাদের পাঠানো বেলুন।