আগাম ভোটে স্বস্তিতে কমলা

  • আগাম ভোটারদের মধ্যে এবিসি নিউজ-ইপসোস, নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজ ও সিএনএন জরিপ।

  • আগাম ভোটে দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে শুধু নেভাদায় সুবিধাজনক অবস্থানে ট্রাম্প।

ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসছবি : এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোটে রেকর্ড হয়েছে। আগাম ভোটের হার দেখে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট—দুই শিবিরই উচ্ছ্বসিত। রিপাবলিকানরা খুশি, কারণ গত নির্বাচনে তারা যত আগাম ভোট পেয়েছিল, এবার তার চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছে। আর ডেমোক্র্যাটরা খুশি, কারণ আগাম ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বড় ব্যবধানে এগিয়ে তাদের প্রার্থী কমলা হ্যারিস।

যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছে এমন মোট জনসংখ্যা ২৩ কোটির বেশি। তবে নিবন্ধিত ভোটার প্রায় ১৬ কোটি। নিবন্ধিত ভোটারের সবাই আবার ভোট দেন না। সর্বশেষ ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৬৬ শতাংশ, যা ছিল গত ১০০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আগাম ভোট পড়েছে ছয় কোটির বেশি।

এবার আগাম ভোট শুরুর পর থেকে ভোট কোন দিকে বেশি পড়ছে, তার একটা আন্দাজ পেতে প্রতিনিয়ত জরিপ হচ্ছে। সর্বশেষ তিনটি জরিপে ভোটারদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি আগাম ভোট দিয়েছেন কি না। এতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন কমলা।

আগাম ভোট নিয়ে এবিসি নিউজ-ইপসোস, নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজ ও সিএনএন জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের চেয়ে ১৯ থেকে ২৯ পয়েন্টের মধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন কমলা। তিনটি জরিপে কমলা বেশি ব্যবধানে এগিয়ে। এর মধ্যে নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজের জরিপে ৫৯ থেকে ৪০ আর এবিসি নিউজ-ইপসোসে ৬২ থেকে ৩৩ পয়েন্টের মধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন কমলা।

আগাম ভোট নিয়ে জরিপে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে মনে করা হচ্ছে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়েও এবার কমলা হ্যারিস আগাম ভোটে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তখন আগাম ভোটারদের নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট–এবিসি নিউজ ও ম্যাকক্লাসি–মারিস্ট কলেজের করা জরিপে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে ৮ থেকে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন হিলারি।

তবে আগাম ভোটে যে–ই এগিয়ে থাকুন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফল নির্ধারিত হবে দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের ভোটে। তবে জরিপে দেখা যাচ্ছে, এসব রাজ্যেও আগাম ভোটে এগিয়ে রয়েছেন কমলা। দোদুল্যমান রাজ্যের আগাম ভোটারদের নিয়ে করা সর্বশেষ চারটি জরিপে দেখা গেছে, দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ছয়টিতে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা।

জরিপগুলো করেছে মারিস্ট, সিএনএন, ফক্স নিউজ এবং ইউএসএ টুডে–সাফোক ইউনিভার্সিটি। জরিপে দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কমলা হ্যারিস অ্যারিজোনায় ৯ থেকে ১২ পয়েন্ট, জর্জিয়ায় ৭ থেকে ১০ পয়েন্ট, মিশিগানে ২৬ থেকে ৩৯ পয়েন্ট, নর্থ ক্যারোলাইনায় ২ থেকে ৬ পয়েন্ট, পেনসিলভানিয়ায় ১৭ থেকে ৩৫ পয়েন্ট ও উইসকনসিনে ২২ থেকে ৬০ পয়েন্ট এগিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।

দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে শুধু নেভাদায় আগাম ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ করা এসব জরিপ অনুযায়ী নেভাদায় কমলা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্প ৬ পয়েন্ট ব্যবধানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।

নির্বাচনী বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে এবার রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। আর এসব জরিপ হয়েছে তাদের মধ্যে অল্প কিছু ভোটার নিয়ে। ফলে জরিপ অনুযায়ী যে নির্বাচনের ফল হবে, তা এখনই সঠিক বলে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আগাম ভোটের জরিপে এগিয়ে থাকার অর্থ সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে মূল নির্বাচনে যাচ্ছেন কমলা। এখন দেখার বিষয় মূল নির্বাচনে কমলা কতটা জনসমর্থন পান।

ট্রাম্পের ভোটের ফল না মানার গুঞ্জন

পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, ২০২০ সালের মতো এবারের নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সমর্থকেরা এখনো দাবি করে যাচ্ছেন, ২০২০ সালে ভোটে কারচুপি করে ট্রাম্পের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

অলাভজনক সংস্থা প্রটেক্ট ডেমোক্রেসির নীতি কৌশলবিদ কাইলি মিলার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘নির্বাচনের ফল ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলে তিনি যে আবারও ফল পাল্টানোর জন্য অপচেষ্টা চালাতে পারেন—এসব দাবির মধ্য দিয়ে সেই বীজই বোনা হচ্ছে। আমরা ২০২০ সালে এটা দেখেছি। আমার মতে, সেই শিক্ষা থেকে ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকেরা এবার আগে থেকে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন।’