যে চার কারণে বাইডেনকে হটিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় থাকাকালে দুবার অভিশংসিত হয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া ফৌজদারি অভিযোগের নানা মামলা তো তাঁর ঘাড়ে রয়েছেই। এরপরও হোয়াইট হাউসের গদিতে আবার বসার সম্ভাবনা রয়েছে ট্রাম্পের।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে ট্রাম্পের। জাতীয় পর্যায়ে করা বিভিন্ন জনমত জরিপের হিসাব বলছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে নিজ দলের অন্যদের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন তিনি।
আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আবারও মনোনয়ন পেতে পারেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প রিপাবলিকান প্রার্থী হলে নির্বাচনে বাইডেনের মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। সেই নির্বাচনে চার কারণে জয় পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র শাসনের দায়িত্ব পেতে পারেন বহু আলোচনা–বিতর্ক তৈরি করা ধনকুবের ট্রাম্প।
নাখোশ ভোটার
জো বাইডেনের নেতৃত্বধীন হোয়াইট হাউস বলছে, দেশের অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থায় আছে। ট্রাম্প যখন ক্ষমতা ছেড়েছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই হার এখন কমে এসেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে। আর ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশ। গত অক্টোবরে তা হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
তবে তরুণ ভোটারসহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বড় একটি অংশ অর্থনীতিকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তাঁরা বলছেন, মুদিপণ্য, গাড়ি–বাড়ি, শিশু ও বয়স্কদের দেখভালসহ বিভিন্ন জরুরি পণ্য ও সেবা খাতে খরচ বেড়েছে। তবে সে অনুযায়ী বেতন বাড়েনি। জনমত জরিপের তথ্য বলছে, ভোটারদের একটি বড় অংশ মনে করেন, ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে রিপাবলিকানদের হাতে মার্কিন অর্থনীতি ভালো থাকে।
ভয় ধরানো
অর্থনীতির বাইরে আরও অনেক কারণে ভোটাররা দোলাচলে রয়েছেন। ট্রাম্প ভোটারদের কাছে নানা দুশ্চিন্তার কথা তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে বহু শ্বেতাঙ্গ নাগরিক রয়েছেন। তারপরও এই দেশ আরও নানা জাতি ও বর্ণের মানুষের উপস্থিতিতে দিন দিন আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠছে এবং সাংস্কৃতিকভাবে বদলে যাচ্ছে।
মার্কিনদের মধ্যে আরও একটি মনোভাব কাজ করছে যে—বাড়ির মালিক হওয়া, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য সম্মানজনক একটি বেতন এবং কলেজে পড়াশোনার মতো বিষয়গুলো অনেকের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এগুলোকেই আমেরিকান জীবনের ভিত্তি হিসেবে মনে করা হয়। এ ছাড়া জরিপে দেখা গেছে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মার্কিন ভোটাররা। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশও ভাবাচ্ছে তাঁদের।
ভয় ধরানো এই বিষয়গুলোই রং চড়িয়ে কাজে লাগানোয় বেশ পারদর্শী ট্রাম্প। তিনি একদিকে লোকজনকে উসকে দিয়ে ‘আগুন লাগান’, অপরদিকে সমাধান বাতলে দিয়ে সেই ‘আগুন নেভানোর’ কাজ করেন। ট্রাম্প প্রথমে ঘোষণা দেন, দেশ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। আর তারপরই নিজেকে রক্ষাকর্তা হিসেবে সামনে আনেন।
ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে ভুল দেখেন না অনেক ভোটার
ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই তাঁর সমালোচনা করেন। ডেমোক্র্যাটদের পাশাপাশি অনেক গণমাধ্যমও তাঁকে হোয়াইট হাউসের জন্য যোগ্য মনে করে না। তবে এমন লাখ লাখ ভোটার রয়েছেন, যাঁরা তা মানতে নারাজ।
এমনকি ট্রাম্পের অনেক সমর্থক মনে করেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার। চলতি বছরের শুরুর দিকে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল রয়টার্স ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইপসস’। তাতে দেখা যায়, ওই সমর্থকদের অন্তত অর্ধেক জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে যদি কোনো অপরাধে সাজাও দেওয়া হয়, তারপর তাঁকে ভোট দেবেন তাঁরা।
বাইডেনের ঘাড়ে সব দোষ
আবাসন, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও চিপ উৎপাদনে বিপুল সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থাননীতি নিয়েছিলেন জো বাইডেন। তবে সেই নীতি যে জীবনে পরিবর্তন এনেছে, তা বেশির ভাগ মার্কিনিকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে দুটি যুদ্ধের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন বাইডেন। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এই সংশ্লিষ্টতা মার্কিনিদের মধ্যে বিভক্তি এনেছে। বিদেশে হস্তক্ষেপ না করার জন্য ট্রাম্পের একটি পরিচিতি রয়েছে। তাঁর নীতি হচ্ছে ‘আমেরিকাকে অগ্রাধিকার’। ইউক্রেন বা ইসরায়েল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে যেসব মার্কিনি ভয় পাচ্ছেন, তাঁরা ট্রাম্পের ‘আমেরিকাকে অগ্রাধিকার’ নীতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন।