ডোনাল্ড ট্রাম্প: আবাসন ব্যবসা থেকে যেভাবে হোয়াইট হাউসে
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তবে রাজনীতিক হিসেবে না হলেও এর আগে থেকেই তিনি ব্যবসায়ী ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি অর্জন করেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের বছর ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন নিউইয়র্ক শহরের কুইনস শহরে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা মেরি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্প ছিলেন স্কটল্যান্ড বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। বাবা ফ্রেড ট্রাম্প ছিলেন জার্মান অভিবাসী এক দম্পতির সন্তান।
ফ্রেড ট্রাম্প নিউইয়র্কে আবাসন ব্যবসা জগতে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। বাবা ছিলেন ট্রাম্পের অনুপ্রেরণা। তাই বড় হয়ে তিনি পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। ১৯৭১ সালে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট হন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন, তখন তাঁকে অনেকে তেমন একটা গুরুত্বসহকারে নেননি। কিন্তু ওই বছর সবাইকে হতবাক করে দিয়ে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনেন। অভিবাসন আইন কঠোর করেন। অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করেন। বেশ কিছু মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেন।
ট্রাম্পের আমলে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট আগের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাবিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনাও করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত চারটি আলাদা ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়া-সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। বাকি তিনটি ফৌজদারি মামলার কাজ আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়েছে। সম্প্রতি নব্বইয়ের দশকের আরেক মডেল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন।
চলতি বছর দুবার গুপ্তহত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। গত জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি শহরে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সমাবেশস্থলের কাছের একটি ভবনের ছাদ থেকে এক তরুণ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এতে তাঁর ডান কানে একটি গুলি লাগে। তাঁর এক সমর্থক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
চলতি বছর দুবার গুপ্তহত্যা চেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। গত জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি শহরে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সমাবেশস্থলের কাছের একটি ভবনের ছাদ থেকে এক তরুণ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। এতে তাঁর ডান কানে একটি গুলি লাগে। তাঁর এক সমর্থক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
এর দুই মাস পর ফ্লোরিডায় গলফ খেলার সময়ও এক বন্দুকধারী ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে চেয়েছিল। কিন্তু গুলি ছোড়ার আগেই সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা বন্দুকধারীকে নিরস্ত করেন।
ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রীর নাম ইভানা। এই দম্পতির ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাঙ্কা ও এরিক নামের তিন সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলসের ঘরে টিফানি নামের এক মেয়ে রয়েছে। ২০০৫ সালে স্লোভেনিয়া বংশোদ্ভূত মার্কিন মডেল মেলানিয়া নাউসকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। তিনি ট্রাম্পের বর্তমান স্ত্রী। এই দম্পতির ১৮ বছর বয়সী ব্যারেন নামের পুত্রসন্তান রয়েছে।
১৯৮০–এর দশকে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কে আবাসন ব্যবসায় কয়েকটি বড় প্রকল্প হাতে নেন। এর মধ্যে ম্যানহাটান গ্লাস স্কাইস্ক্র্যাপার ও ট্রাম্প টাওয়ার অন্যতম।
এ সময় আবাসন ব্যবসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেলিব্রিটি বা তারকা হিসেবে ট্রাম্পের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১৯৮৭ সালে সাংবাদিক টনি শোয়ার্টজের সহায়তায় ‘দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’ নামের আধা-আত্মজীবনীমূলক একটি বই বের করেন ট্রাম্প। এরপর থেকে তাঁর তারকাখ্যাতি কখনো মলিন হয়নি।
ট্রাম্প ব্যবসায়ী হিসেবে কতটা সফল, তা নিয়ে নানা মত আছে। ১৯৮৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে ট্রাম্পের সম্পদের অর্থমূল্য প্রায় ১০০ কোটি ডলার বলে অনুমান করা হয়েছিল। কিন্তু আয়কর রিটার্নের নথির ভিত্তিতে নিউইয়র্ক টাইমস দাবি করেছিল, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে ট্রাম্প ১০০ কোটি ডলারের বেশি লোকসান দিয়েছেন।
অতিথি শিল্পী হিসেবে কয়েকটি টেলিভিশন সিরিজ ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে দ্য ফ্রেশ প্রিন্স অব বেল এয়ার ও হোম অ্যালোন টু অন্যতম। তবে ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ‘দ্য অ্যাপ্রেনটিস’ নামের একটি রিয়েলিটি শোর উপস্থাপক হিসেবে ট্রাম্পের নাম যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। আর পরের বছরের নির্বাচনেই তিনি বাজিমাত করেন।
২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে ট্রাম্প হেরে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ বছরের ইতিহাসে পরাজিত কোনো প্রেসিডেন্টের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার উদাহরণ নেই। কিন্তু এবার যদি তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারাতে পারেন, সেটি আরেকটি রেকর্ড হবে। কারণ, এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ২০২৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার সময় তাঁর বয়স হবে ৮২ বছর। অর্থাৎ তখন সবচেয়ে বেশি বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি তখন ক্ষমতা ছাড়বেন।