রাশিয়ায় গ্রেপ্তার মার্কিন সেনাকে প্রেমিকার সঙ্গে মারামারি করতে দেখেছিলেন স্ত্রী

রাশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া মার্কিন সেনা গর্ডন ব্ল্যাকফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ায় বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়া মার্কিন সেনা গর্ডন ব্ল্যাককে নিয়ে নতুন ও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মেগান ব্ল্যাক। রয়টার্সকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে মেগান বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকার সময় গর্ডনের কাছ থেকে হঠাৎ একটি ভিডিও কল চলে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে তাঁর ছয় বছরের মেয়ের কাছে ওই ভিডিও কল আসে। সেখানে গর্ডন ও তাঁর রুশ বান্ধবীকে মারামারি করতে, রক্তাক্ত হতে দেখেছিলেন মা-মেয়ে।

মেগান বলেন, এ ঘটনা রাশিয়ায় গর্ডনের গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস আগের। ভিডিও কল চালু থাকা অবস্থায় কলহে জড়ায় গর্ডন ও তাঁর রুশ বান্ধবী। একপর্যায়ে হাতাহাতি হয় তাঁদের। ওই নারী গর্ডনের মুখে আঁচড় দেন। রক্তাক্ত করেন। একপর্যায়ে হাতে ছুরি তুলে নেন ওই নারী।

রয়টার্সকে মেগান বলেন, ‘ওই নারী গর্ডনকে ছুরিকাঘাত করেছিল। তাঁর মুখ বেয়ে রক্ত পড়ছিল। এটা দেখে আমাদের মেয়ে বেশ বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল।’

মেগানের এই দাবির বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গর্ডনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

গর্ডনের গ্রেপ্তারের ঘটনা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলার প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্কে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছিল। এখন তা আরও জোরদার হয়েছে। এখন গর্ডনকে রুশ কর্তৃপক্ষ কোথায় রেখেছে, সেটাও জানা যায়নি।

গর্ডনের বয়স ৩৪ বছর। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে স্টাফ সার্জেন্ট পদে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ছিলেন তিনি। তবে স্ত্রী-সন্তান থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। গর্ডনের রুশ বান্ধবীও দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফোর্ট ক্যাভাজসের বাড়িতে গর্ডনের ফিরে আসার প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়াই রাশিয়ার বন্দরনগরী ভ্লাদিভস্তকে যান। সেখান থেকেই ২ মে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় রুশ কর্তৃপক্ষ। মার্কিন এই সেনার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে রাশিয়া। পরবর্তী সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ব্ল্যাকের পরিবারকে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার ব্যাপারে জানানো হয়।

গর্ডনের মা মেলোডি জোনস রয়টার্সকে বলেছেন, ‘কুকুর-বিড়ালের মতো লড়াই করার পরও তাঁর ছেলে রুশ বান্ধবীকে অনুসরণ করতে রাশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। আমি তাঁদের দুজনকেই বলেছিলাম, তোমাদের আর একসঙ্গে থাকার দরকার নেই।’

ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন গর্ডন। কিন্তু বাহিনীর অনুমতি না নিয়ে রাশিয়ায় ভ্রমণ করায় মার্কিন সেনাবাহিনীর নিয়ম ভেঙেছেন তিনি। পেন্টাগন বলেছে, রাশিয়া যেতে গিয়ে গর্ডন চীনের ওপর দিয়ে ভ্রমণ করেছেন।

গর্ডন গুপ্তচরবৃত্তি করতে রাশিয়া গিয়েছিলেন, এমন ইঙ্গিত রুশ কর্তৃপক্ষ, পেন্টাগন, গর্ডনের মা-স্ত্রী কেউই দেননি। বরং রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ ঘটনায় রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

গর্ডনের গ্রেপ্তারের পর শুধু রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মেগান। নিজের দাম্পত্য জীবন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। জানান, বিচ্ছেদের বিষয়টি চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। আর তখনই গর্ডন রাশিয়ায় গিয়ে গ্রেপ্তার হন।

মেগানের আইনজীবী জেফ লিনিক জানান, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আবাসন ভাতা পান গর্ডন। কিন্তু এ বাবদ তিনি স্ত্রী মেগানকে কোনো অর্থ দেননি। এই দম্পতির বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও মার্কিন সামরিক নীতি মেনে মেগান ও তাঁর সন্তান সহায়তা পেয়ে যাবেন।

সাক্ষাৎকারে মেগান জানান, ২০১৪ সালে টেক্সাসের কিলেনে একটি পানশালায় গর্ডনের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তাঁরা। প্রণয় থেকে পরিণয়, এরপর কোলজুড়ে আসে একমাত্র সন্তান। কিন্তু সম্পর্ক দ্রুত বদলে যেতে শুরু করে। ২০১৮ সালের দিকে গর্ডন দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার পর তাঁদের বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

মেগান জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি রুশ বান্ধবীর সঙ্গে গর্ডনের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। তখন ওই নারীর সঙ্গে গর্ডনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেছিলেন। মেগান বলেন, ওই রুশ নারী গর্ডনকে ‘স্বামী’ বলে পরিচয় দেন।

অন্যদিকে গর্ডনের মা জানান, কাগজপত্রে ঝামেলা থাকার কারণে ওই রুশ নারীকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, এমনটাই মনে করতেন তিনি। এমনকি তিনি তাঁর ছেলেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে বান্ধবীর সন্ধানে যাতে সে আবার রাশিয়ায় চলে না যায়।

মেগান জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি রুশ বান্ধবীর সঙ্গে গর্ডনের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন। তখন ওই নারীর সঙ্গে গর্ডনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেখেছিলেন। মেগান বলেন, ওই রুশ নারী গর্ডনকে ‘স্বামী’ বলে ডেকেছিল।

তবে গর্ডন যে রাশিয়ায় যেতে পারেন কিংবা গেছেন—এ বিষয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তান কিছুই জানত না। বরং মেগান আশা করেছিলেন, গর্ডন সিউল ছাড়ার পর টেক্সাসে ফিরবেন।

২ মে রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বন্দরনগরী ভ্লাদিভস্তকের একটি হোটেল থেকে গর্ডনকে গ্রেপ্তার করেছে। মেগান জানান, এর আগে আগে গর্ডন আমাকে একটা বার্তা পাঠায়। জানায়, আপাতত বাড়ি ফিরছে না সে।

মেগান জানান, গর্ডনের কাছ থেকে সেটাই ছিল তাঁর কাছে আসা সর্বশেষ কোনো বার্তা। তিনি বলেন, পুরো ঘটনাটি তাঁর মেয়ের কাছে বাবার ভাবমূর্তি নিয়ে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। এখন মেয়ে নিজের বাবাকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে ভাবছে।

আরও পড়ুন