‘বেবিলোন কোথা হারায়ে গিয়েছে—মিশর-‘অসুর’ কুয়াশাকালো;/ চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক,—মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!’ এভাবেই চাঁদের বন্দনা করেছেন কবি জীবনানন্দ দাশ। শুধু জীবনানন্দই নন, কালে কালে কবি–সাহিত্যিক থেকে সাধারণ মানুষ, শিশু থেকে শতবর্ষী—সবার কাছেই আকর্ষণীয় চাঁদ। এবারের পূর্ণিমায় এই চাঁদ দেখা দেবে অনন্য এক রূপে।
চাঁদের এই রূপকে বলা হয় ‘পিঙ্ক মুন’ বা গোলাপি চাঁদ। প্রতিবছর এপ্রিল মাসের পূর্ণিমার চাঁদকেই এই নাম দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, এ বছরের গোলাপি চাঁদ পরিপূর্ণরূপে ধরা পড়বে দেশটির স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৪৯ মিনিটে। তবে সোমবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল—তিন দিন দেশটিতে এই চাঁদ দেখা যাবে। আর ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় এই গোলাপি চাঁদ পূর্ণরূপে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে আগামীকাল বুধবার।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, পৃথিবী যখন সূর্য ও চাঁদের মাঝবরাবর অবস্থান করে, তখনই পূর্ণ চাঁদ দেখা যায়। এ সময় চাঁদ পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণরূপে আলোকিত দেখায়। তবে নাম গোলাপি হলেও এপ্রিলের এই পূর্ণ চাঁদের রং কিন্তু পুরোপুরি গোলাপি নয়। ধোঁয়াসহ আবহাওয়াগত নানা কারণে এই চাঁদ আমাদের চোখে গোলাপি রঙে দেখা দেবে না। সাধারণত সোনালি রঙেই তা দেখা যাবে। কোথাও কোথাও কমলা রঙেও চাঁদটি দেখা যেতে পারে। রাত বাড়ার একপর্যায়ে চাঁদটি উজ্জ্বল সাদা রং ধারণ করবে।
বিশ্বজুড়ে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে সারা বছরের পূর্ণিমার চাঁদের নানা নামকরণ করা হয়েছে। এসব নাম এসেছে বিভিন্ন ঋতু, ঐতিহাসিক ফসল, এমনকি কোনো প্রাণীর বিচিত্র আচরণ থেকেও। সে হিসেবে গোলাপি চাঁদ নাম পেয়েছে আমেরিকা অঞ্চলে বসন্তের শুরুতে ফোটা একটি বুনো ফুল থেকে। আঞ্চলিকভাবে গোলাপি রঙের এই ফুলকে ‘মস পিঙ্ক’ নামেও ডাকা হয়। এপ্রিলের পূর্ণিমার চাঁদের আরও কিছু নাম রয়েছে—‘ফিশ মুন’ (মাছ চাঁদ), ‘গ্রাস মুন’ (ঘাস চাঁদ) ও ‘এগ মুন’ (ডিম চাঁদ)।
বেশ কয়েকটি কারণে গোলাপি চাঁদের তাৎপর্য রয়েছে। অনেক সংস্কৃতিতে এই চাঁদকে দেখা হয় বৃদ্ধি, পুনর্জন্ম ও প্রকৃতির নবজীবন লাভের সময় হিসেবে। বলা হয়ে থাকে এটা জীবনের প্রকৃতিগত আবর্তন এবং প্রতিটি মৌসুম প্রকৃতিতে যে একেক সৌন্দর্য নিয়ে আসে, তা মনে করিয়ে দেয়।
[তথ্যসূত্র: বিবিসি, নাসা ও ইউএসএ টুডে]