কমলা-ট্রাম্প প্রথম বিতর্ক: ভোটাররা চান নাটক কম, নীতির কথা বেশি

কমলা হ্যারিস (বাঁয়ে), ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডানে)ফাইল ছবি

সর্বশেষ টেলিভিশন বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পরস্পরের দিকে তীব্র বাক্যবাণ ছুড়েছেন, করে গেছেন ব্যক্তিগত আক্রমণ। গত জুলাই মাসের ওই বিতর্ক ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকে উল্টোপথে ঘুরিয়ে দিয়েছে।

সেদিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিতর্কের ধারা তাঁকে ডেমোক্রেটিক দল থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করে। তাঁর জায়গায় দলীয় প্রার্থী হন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

১০ সেপ্টেম্বর রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথমবার টেলিভিশনে সরাসরি নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেবেন কমলা।

এই বিতর্ক উভয় দলের জন্য ভোটারদের সামনে নিজেদের নতুন করে তুলে ধরার সুযোগ এনে দিয়েছে।

এই বিতর্কে কী দেখতে চান, সেটা নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ভোটাররা। তাঁরা বলেছেন, রাজনৈতিক ঝগড়া নয়, তাঁরা নীতি নিয়ে আরও বেশি বক্তব্য দেখতে চান।

বিবিসি বেশ কয়েক ভোটারের কাছে তাঁরা কমলা ও ট্রাম্পের মধ্যে কেমন বিতর্ক দেখতে চান, তা জানতে চেয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সাতজন ভোটারের কথা শোনা যাক।

রবার্ট অলিভার: (রিপাবলিকান দল)

উটাহর বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সী এই তরুণের পরিবার রিপাবলিকান দলের সমর্থক। কিন্তু তিনি ২০২০ সালে জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন। এ বছর নভেম্বরে তিনি পুনরায় ট্রাম্পের পক্ষে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

রবার্ট অলিভার বলেন, ‘তাঁরা উভয়ে কী করতে চলেছেন, আমি সেটা দেখতে আগ্রহী। কমলা হ্যারিস সম্প্রতি খুব বেশি সাক্ষাৎকার না দেওয়ার জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় তিনি কম জনসম্মুখে আসেন। আর ট্রাম্প সমালোচিত হয়ে থাকেন যেভাবে তিনি বিতর্ক লড়েন এবং নিছক তাঁর উচ্চকিত কথাবার্তার জন্য।’

আজ ১০ সেপ্টেম্বর রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথমবার সরাসরি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন কমলা হ্যারিস। এ বিতর্ক উভয় দলের প্রার্থীর জন্য ভোটারদের সামনে নতুন করে নিজেদের নীতি ও কৌশল পরিষ্কার করার সুযোগ।

এবার ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অলিভার। তবে বিতর্কে কমলা কেমন করেন, সেটা দেখতে  তিনি আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে চাই, চটজলদি এবং প্রম্পটারের ঠোঁট পড়ার সুযোগ ছাড়া তিনি (কমলা) কেমন কথা বলেন। ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি বিতর্কে তিনি কতটা দ্রুত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন।’

ড্যানিয়েল ক্রামরিন: (ডেমোক্রেটিক দল)

গতবার জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন কলোরাডোর বাসিন্দা ২৮ বছরের ডেনিয়েল ক্রামরিন। তিনি অধীর আগ্রহে কমলা-ট্রাম্প বিতর্ক দেখার অপেক্ষায় আছেন।

এই তরুণ বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, কী হতে চলেছে, আমি সেটা জানি। আমি জানি কমলা হ্যারিস খুবই দক্ষ একজন বিতার্কিক। আমি এখনো চার বছর আগে তাঁর এবং মাইক পেন্সের বিতর্কের কথা স্মরণ করতে পারি। আমি ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখার অপেক্ষায় আছি। মঞ্চে কেউ একজন তাঁকে (ট্রাম্পকে)  সরাসরি প্রতিহত করার সক্ষমতা রাখে, একটি সত্যিকারের বিরোধী শক্তি হয়ে, এমন কাউকে পেয়ে আমি খুশি।’

বিতর্কে ট্রাম্প দ্রুত কথা বলেন এবং একবারে অনেক কথা বলেন। ট্রাম্পের এই কৌশল কমলার জন্য সবচেয়ে বড় ফাঁদ বলে মনে করেন এই তরুণ। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প হড়বড় করে অনেক কথা বলেন এবং প্রতিপক্ষকে সহজে নিজের কথার জালে জড়িয়ে ফেলেন। আমি দেখতে চাই, ট্রাম্পের মুখোমুখি হয়েও তিনি নিজের আশাবাদী অবস্থান ধরে রাখতে এবং ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারছেন।’

সত্যি বলতে, এই বিতর্ক দেখার কোনো পরিকল্পনা আমার নেই, সরাসরি তো নয়ই। দুই প্রার্থীর কাউকে নিয়েই আমার আগ্রহ নেই। গত কয়েকটি নির্বাচনে আমি আমাদের বিতর্কের অবস্থা দেখেছি। মঞ্চ সাজানোই হয় তাঁর জন্য, যে চিৎকার করে কথা বলতে পারে এবং কৌতুক করতে পারে, যেটাকে সংবাদের শিরোনাম করা যায়। দরকারি কোনো কথা তাঁদের বলতে শুনিনি আমি।
—জেসি মাজ্জোনি, স্বতন্ত্র ভোটার ও পেনসিলভানিয়ার বাসিন্দা

জেসি মাজ্জোনি: (স্বতন্ত্র)

দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার বাসিন্দা স্বতন্ত্র ভোটার জেসি মাজ্জোনি। তিনি ২০২০ সালে জো বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু এবার তিনি তৃতীয় কাউকে ভোট দেবেন অথবা নভেম্বরে সিদ্ধান্ত নেবেন।

৩১ বছর বয়সের এই নারী বলেন, ‘সত্যি বলতে, এই বিতর্ক দেখার কোনো পরিকল্পনা আমার নেই, সরাসরি তো নয়ই। দুই প্রার্থীর কাউকে নিয়েই আমার আগ্রহ নেই। গত কয়েক নির্বাচনে আমি আমাদের বিতর্কের অবস্থা দেখেছি। মঞ্চ সাজানোই হয় তাঁর জন্য যে চিৎকার করে কথা বলতে পারে এবং কৌতুক করতে পারে, যেটাকে সংবাদের শিরোনাম করা যায়। বাস্তব কোনো কথা তাদের বলতে শুনিনি আমি।’

মিসটি ড্যানিস: (রিপাবলিকান দল)

ক্যালিফোর্নিয়ার মিসটি ড্যানিস ২০১৬ এবং ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। পুনরায় তাঁকেই ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তবে তিনি উভয় প্রার্থীর কাছ থেকে নীতির বিষয়ে আরও বক্তব্য শুনতে চান।

৪৫ বছরের এই নারী বলেন, ‘আমি চাই এটা চাকরির সাক্ষাৎকারের মতো হোক, যেন আমি একজন প্রেসিডেন্টকে বেছে নিচ্ছি। দারিদ্র্যসীমায় থাকা মানুষদের সঙ্গে রোজই আমার কথা হয়। মনে হচ্ছে, এটা আরও খারাপ হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত মত, ট্রাম্পের আমলে অর্থনীতি আরও ভালো ছিল। কমলা হ্যারিস কী করতে চলেছেন, আমি তা শুনতে চাই।’

তাঁর কী মনে হচ্ছে আমি তাঁকে বেশির ভাগ সময় সেটাই বলতে শুনেছি। আপনি যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু মনে হওয়া দিয়ে পরিচালনা করতে পারবেন না।’

এই নারী চান বিতর্কে উভয় দলের প্রার্থী তাঁদের রাজনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলুক এবং দারুণ উপভোগ্য একটি বিতর্ক হোক।

কনোর লোগান: (রিপাবলিকান দল)

ওয়াশিংটনের বাসিন্দা কনোর লোগান ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দেন। সেটিই ছিল তাঁর প্রথম ভোট। তিনি মনে করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে দেশের অর্থনীতি ভালো ছিল।

কনোর বলেন, ‘আমি জানতে চাই, আমাদের অর্থনীতি কবে আবার ঠিক পথে ফিরে যাচ্ছে। অবৈধ অভিবাসী হ্রাসে দুই প্রার্থীর কী পরিকল্পনা আছে, আমি সেটা জানতেও আগ্রহী।  আমার মনে হয় কমলা হ্যারিস তাঁর মতাদর্শ গোপন করছেন অথবা সেটা থেকে সরে গেছেন। বরং আমার বিশ্বাস, সুবিন্যস্ত নীতিই ট্রাম্পের জোরের জায়গা। তবে ট্রাম্পের আচরণ, আমার মনে হয় এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।’

ফেলিসিটি ফিলগেট (স্বতন্ত্র)

এই নারী ভোটার ২০২০ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন। এবার এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

নিউহ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা ফিলগেট বলেন, ‘আমি খুশি, আমরা কমলাকে পেতে যাচ্ছি এবং আমি সত্যিই খুশি যে তাঁরা একজন কথা বলার সময় অন্যজনের মাইক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে (যাতে কেউ কারও বক্তব্যের সময় বিঘ্ন ঘটাতে না পারে)।’

বিতর্কে প্রার্থীরা একে অপরের কথা খুবই ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে নেন বলে মনে করেন ৩৩ বছর বয়সী এই নারী। তিনি বলেন, ‘এমনকি সর্বশেষ বিতর্কেও। আমার মনে হচ্ছিল, আপনারা কী প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন? নাকি অন্যজন আপনাকে নিয়ে যা বলছেন, সেটা কাটাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে যাচ্ছেন।’

ডগলাস স্টুয়ার্ট (ডেমোক্রেটিক দল)

জর্জিয়ার তরুণ ডেমোক্র্যাট ডগলাস স্টুয়ার্ট বাইডেনের সরে দাঁড়ানোতে খুব খুশি হয়েছেন। বলেন, তাঁর দলের হাতে ট্রাম্পকে হারাতে এখন আগের থেকে ভালো সুযোগ আছে।

ডগলাস স্টুয়ার্ট ১০ সেপ্টেম্বরের বিতর্ক দেখবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের বিপক্ষে বাইডেন একদমই ভালো করতে পারেননি। নতুন প্রার্থী কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের বিপক্ষে কেমন করেন, সেটা দেখতে তাই তিনি আরও বেশি উৎসুক হয়ে আছেন।

ডগলাস বলেন, ‘আমার কাছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশবিষয়ক নীতিমালা কী হবে, তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর (কমলা) কাছ থেকে এ বিষয়ে কী শুনবে পাব, তা নিয়ে আমার কৌতূহল আছে। তবে অন্তত আমার জন্য দুঃখের বিষয় হলো, ট্রাম্পের বদলে যে কাউকেই আমি ভোট দেব।’

আপনার (কমলার) নীতিগত অবস্থান নিয়ে আমার খুব একটা মাথাব্যথা নেই। আমি শুধু জানি, আপনার নীতিগত অবস্থান কী নয়। সুতরাং যত খারাপ কিছুই হোক না কেন, আমি আপনার কাছে বাধা পড়ে আছি।