জর্ডানে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে হামলার ‘কড়া জবাব’ দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র

  • জর্ডানে সেনাঘাঁটিতে হামলায় নিহত তিন সেনার পরিচয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

  • ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে বাইডেনের ওপর রিপাবলিকানদের চাপ বাড়ছে।

ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনা। এ রকম মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা রয়েছেরয়টার্স ফাইল ছবি

জর্ডানে সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনায় ‘কড়া জবাব’ দেওয়ার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে পরিকল্পনা যাতে ফাঁস না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর আগের চেয়ে শক্তিশালী হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি দেশটি ইরানের অভ্যন্তরেও কোনো সামরিক স্থাপনাকেও লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

গত রোববার জর্ডানে সেনাঘাঁটিতে হামলায় নিহত তিন সেনার পরিচয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় আহত হয়েছেন ৪০ জনের বেশি সেনা। গত অক্টোবরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন সেনাদের ওপর এটাই বড় ধরনের হামলার ঘটনা। ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন বলছে, পাল্টা হামলা চালালেও তারা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না।

এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর মতো জবাব দেওয়ার চাপ বাড়ছে বাইডেনের ওপর। গত অক্টোবর থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনাগুলোকে ১৬০ বারের বেশি লক্ষ্যবস্তু করেছে ইরান-সমর্থিত জঙ্গিরা।

স্পষ্ট বার্তা দিতে ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালানোরও আহ্বান জানিয়েছেন কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা। তবে বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যে বলেছে, পাল্টা হামলা চালালেও তারা যুদ্ধ চায় না। ইরানও যুদ্ধ চায় না।

আঞ্চলিক যুদ্ধে না জড়িয়ে ড্রোন হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, সেটা এখন বাইডেন প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে বেশ কিছু হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতেও দমেনি জঙ্গিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মার্ক হার্টলিং বলেছেন, মার্কিন সেনার মৃত্যু মানে প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিতে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে। কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে, যা কেবল একটি দেশ কিংবা এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন, ইরানের অভ্যন্তরে হামলার আশঙ্কা কম।

পাল্টা হামলার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত রাখতে ঠিক কোথা থেকে এবং কারা হামলা করেছে, তা সুনির্দিষ্ট করে প্রকাশ করার বিষয়ে সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরান-সমর্থিত কাতাইব হিজবুল্লাহ এ হামলার নেপথ্যে ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো কিছুই আমাদের বিবেচনার বাইরে নেই।’

আরও পড়ুন

‘ভালো বিকল্প নেই’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ইরান-বিষয়ক প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অ্যালেক্স ভাটাঙ্কা উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে এএফপিকে বলেন, এটি একটি চূড়ান্ত মুহূর্ত।

ভাটাঙ্কা বলেন, তেহরান জানে, ইরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রও আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়াতে আগ্রহী নয়। তবে ইরানের কর্মকর্তারা এ-ও জানেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর চাপ তত বাড়ছে। ফলে এখন তাঁকে রাজনৈতিকভাবে কিছু একটা করতে হবে।

ভাটাঙ্কার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের কথিত ‘প্রতিরোধ অক্ষের’ বিরুদ্ধে আরও হামলা চালাবে। এই হামলার মধ্য দিয়ে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট বার্তা দেবে, উত্তেজনা বেড়ে আরও বড় আকার ধারণ করলে পরিণতি সামলাতে পারবে না তেহরান।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা টমাস ওয়ারিক বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো ভালো বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের এই জ্যেষ্ঠ ফেলো মনে করেন, ইরাকে পূর্ণমাত্রার হামলা সে দেশ থেকে মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার সমর্থনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে তেহরানকে একটি কৌশলগত বিজয় এনে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে থাকতে পারে, ইরানের অভ্যন্তরে একটি বড় সামরিক স্থাপনাকে সরাসরি হামলার লক্ষ্যবস্তু করা কিংবা সিরিয়ায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অবস্থান ধ্বংস করা।

টমাস ওয়ারিক বলেন, এই বিকল্প দুটির কোনোটিই ভালো নয়। উভয় বিকল্পের ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে থাকার ঝুঁকি আছে, যা বাইডেন প্রশাসন এড়ানোর আশা করে আসছিল।