ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে কানাডা
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে কানাডা। দেশজুড়ে সক্রিয় রয়েছে ১ হাজারের বেশি দাবানল। আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে পূর্বের কিউবেক প্রদেশ পর্যন্ত। প্রাণ বাঁচাতে নিজ শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
দাবানলের মুখে উত্তর-পশ্চিম কানাডার ইয়োলোনাইফ শহরের অবস্থা বেশ সঙিন। শহরের ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে গেছে আগুন। প্রায় ২০ হাজার মানুষ শহরটি ছেড়ে যাচ্ছেন। বিগত কয়েক দিনে সেখান থেকে আরও কয়েক শ মানুষ পালিয়েছেন।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ইয়োলোনাইফ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ও কারাবন্দীদেরও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আদ্রিয়ান ডিক্স বলেছেন, প্রায় ৫৫ জন রোগী ও সেবাকেন্দ্রে নিবাসীদের ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৯০ কারাবন্দীকে ইয়োলোনাইফ থেকে নিরাপদে নেওয়া হয়েছে।
এখন যাঁরা দাবানল থেকে বাঁচতে ইয়োলোনাইফ ছাড়ছেন, কয়েক দিন আগে তাঁদের অনেকই একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। দাবানলের আগুনের জেরে তাঁরা চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ফোর্ট স্মিথ ও হে রিভার শহর ছেড়ে ইয়োলোনাইফে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ইয়োলোনাইফ থেকে ভ্যানকুভারে সরে যাওয়া বাসিন্দাদের মধ্যে একজন হানা ভ্যান ডার উয়েলেন। একটি বিয়েতে অংশ নিতে ইয়োলোনাইফে গিয়েছিলেন তিনি। শহরটির অবস্থা এখন ‘ভুতুড়ে’ উল্লেখ করে এই নারী বলেন, ‘আমি হোটেলের রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল যেন টাইটানিকে রয়েছি। টাইটানিক সিনেমার একটি দৃশ্যের কথা মনে পড়ছিল—যখন সবাই খাবার খাচ্ছিলেন, আর হঠাৎ চিৎকার আসা শুরু করল।’
এদিকে ইয়োলোনাইফের থেকে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার উত্তরে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কেলোনা শহর থেকেও দাবানলের মুখে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বাসিন্দা রয়েছেন। শহরটির পশ্চিমাঞ্চলে কিছু অবকাঠামো ইতিমধ্যেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ প্রদেশের লিটন শহরের বাসিন্দাদেরও নিরাপদে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ২০২১ সালেও দাবানলের ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শহরটি। সে সময় শহরের এক হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদে সরে যেতে হয়েছিল। তাঁদের বেশির ভাগই আগুন নেভার পর বহুদিন লিটনে ফিরে আসতে পারেননি।
দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ইয়োলোনাইফে যেন আগুন প্রবেশ না করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে কাজ করছেন তাঁরা। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও। কানাডার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মাইক ওয়েস্টউইক বলেন, সামনের দিনগুলোকে বাতাস আগুনকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেবে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সামনের দিনগুলো কঠিন হবে।