ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক তাঁর প্রতিষ্ঠানের ওপর কী প্রভাব ফেলবে

ট্রাম্পের এক নির্বাচনী সভায় টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। ৫ অক্টোবর, পেনসিলভানিয়াছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগেভাগেই সমর্থন দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এখন ওই সমর্থন ধনকুবের এ উদ্যোক্তাকে এক ব্যতিক্রমী প্রভাব এনে দেবে; যা তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারের আনুকূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

ফেডারেল হিসাব বলছে, ট্রাম্প-সমর্থক এক গোষ্ঠীকে নির্বাচনী প্রচার বাবদ মাস্ক অন্তত ১১৯ মিলিয়ন (১১ কোটি ৯০ লাখ) মার্কিন ডলার দিয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচারকার্যে বিভিন্ন সময় সশরীর অংশ নিয়েছেন।

ট্রাম্পকে মাস্কের সমর্থনের প্রভাব কী হতে পারে, এ বিষয়ে ধনকুবের এই ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানের ছয়টি সূত্র ও দুজন সরকারি কর্মকর্তার (যাঁদের মাস্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে) সাক্ষাৎকার নিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এসব সূত্র ও সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, মাস্কের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সুদূরপ্রসারী কৌশলেরই প্রতিফলন ঘটেছে। এর মাধ্যমে তিনি চান তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে আড়ালে রাখতে। তাঁরা বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মাস্ক তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে পূর্ণ সুবিধা আদায় করবেন।

মাস্ক চান, তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধের বেড়াজাল থেকে আড়ালে রাখতে। ট্রাম্পের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মাস্ক তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে পূর্ণ সুবিধা আদায় করবেন।

মাস্কের ব্যবসায়িক স্বার্থ-টেসলা বৈদ্যুতিক যান থেকে শুরু করে স্পেসএক্স রকেট ও নিউরালিংক ব্রেন চিপ সরকারি নিয়মকানুন, ভর্তুকি সুবিধা বা নীতির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

স্পেসএক্সের শীর্ষস্থানীয় একজন সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যমান সব নিয়মকানুনকে মাস্ক তাঁর ব্যবসা ও উদ্ভাবনের পথে বাধা হিসেবে দেখে থাকেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তাঁর প্রশাসনকে মাস্ক ওই সব নিয়মকানুন বা বিধিনিষেধ কাটানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন, যাতে যা ইচ্ছা তিনি তা করতে পারেন।

পেনসিলভানিয়ায় গত ১৩ জুলাই এক নির্বাচনী সমাবেশে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যান ট্রাম্প। ওই সময় গুলি তাঁর কানে লাগে। সেই দিনই ট্রাম্পকে সমর্থন করার ঘোষণা দেন টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেন সরে দাঁড়ালে কমলা হ্যারিস তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। এতে নির্বাচনে কমলার সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েন ট্রাম্প।

(সরকারি) নিয়মনীতির কাটছাঁট মঙ্গলে স্পেসএক্সের পাড়ি জমানোর প্রচেষ্টা বেগবান করবে। তিনি (মাস্ক) যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্টার্টআপের মতো কাজ করাতে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইলন মাস্কের মতো সেরা উদ্যোক্তা আর নেই।
-শেরভিন পিশেভার, মার্কিন পুঁজিপতি ও মাস্কের সমর্থক

এমনই একটি সময় ট্রাম্পের পাশে এসে দাঁড়ান মাস্ক। বড় অঙ্কের আর্থিক সহায়তা দেন ট্রাম্পের প্রচারশিবিরকে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনের রাতে মাস্ক ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো ক্লাবে কাটিয়েছেন। ট্রাম্পও বলেছেন, তিনি মাস্ককে তাঁর প্রশাসনের ‘দক্ষতার সম্রাট’ বলে ডাকবেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে সর্ম্পকের বিষয়ে জানতে চাইলে টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিংক ও মাস্ক—কেউ সাড়া দেননি। তবে ট্রাম্পের প্রচারশিবির মাস্ককে ‘এক প্রজন্মের শিল্পনেতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে রয়টার্সকে বলেছে, দেশের ‘ভঙ্গুর ফেডারেল আমলাতন্ত্র অবশ্যই মাস্কের ধারণা ও দক্ষতা থেকে উপকৃত হবে’।

একসময় মাস্ক নিজেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা একজন ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করেছিলেন। সেই লক্ষ্যে পরিবেশদূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ি আনার ঘোষণা দেন তিনি। আরও ঘোষণা দেন, এমন রকেট তৈরির, যাতে চড়ে মানুষ বিলুপ্তির পথে ছুটে চলা এ পৃথিবী থেকে পালিয়ে মঙ্গলে পাড়ি জমাতে পারে।

তবে মাস্ক এখন আরও বেশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান এই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তাঁর শিল্প–সাম্রাজ্যকে ‘গিল্ডেড এজ’ (১৮৭০–এর দশকের শেষের দিক থেকে ১৮৯০–এর দশকের শেষের দিক) এর পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। ওই সময় জে পি মরগান ও জন ডি রকফেলারের মতো শিল্পপতিরা তাঁদের ব্যবসা ও সম্পদ বাড়িয়ে নিতে সরকারি নীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করতেন।

মাস্কের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তাঁর সমর্থকেরা দারুণ অনুপ্রাণিত। তাঁরা বাইডেন-কমলা সরকারকে মাস্কের উচ্চ প্রযুক্তির কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাধা হিসেবে দেখে থাকেন। তাঁদেরই একজন পুঁজিপতি শেরভিন পিশেভার। মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সে বিনিয়োগ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে সিলিকন ভ্যালিকে ট্রাম্পমুখী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

শেরভিন পিশেভার বলেন, ‘(সরকারি) নিয়মনীতির কাটছাঁট মঙ্গলে স্পেসএক্সের পাড়ি জমানোর প্রচেষ্টা বেগবান করবে। তিনি (মাস্ক) যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্টার্টআপের মতো কাজ করাতে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইলন মাস্কের মতো সেরা উদ্যোক্তা আর নেই।’