ভারী তুষারে গাড়িতে আটকা ছয় দিন, যা খেয়ে বেঁচে ছিলেন বৃদ্ধ
ভারী তুষারের (স্নোব্যাংক) মাঝে গাড়ি নিয়ে আটকা পড়েন ৮১ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। চারপাশে হিমশীতল তুষার, কোনো জনমানবের দেখা নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় এক সপ্তাহ আটকে ছিলেন তিনি। আর এই সময় সঙ্গে থাকা চকলেট, স্ন্যাকস ও বিস্কুট খেয়ে বেঁচে ছিলেন এই বৃদ্ধ।
ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে। ওই বৃদ্ধের নাম জেরি জুরেট। তিনি গণিতবিদ ও নাসার সাবেক কর্মকর্তা।
সিএনএন–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেরি ক্যালিফোর্নিয়ার বিগ পাইনে একটি পাহাড়ি বাড়িতে থাকেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে নেভাদার গার্ডনারভিলের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে গাড়ি চালিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় এখানে পৌছাঁনো যায়। কিন্তু রওনা দেওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে তুষার ঝড়ের কারণে জেরি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তিনি গাড়ি নিয়ে একটি সরু পথের ধারে স্নোব্যাংকে আটকা পড়েন।
সারা রাত তুষার ঝড়ের কারণে জেরিতে গাড়িতেই রাত কাটাতে হয়েছিল। তাপমাত্রাও দ্রুত নেমে যেতে থাকে। এই হিমশীতল রাতে উষ্ণতার জন্য তাঁর কাছে উইন্ডব্রেকার ও একটি তোয়ালে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই ন্যূনতম গ্যাস ও ব্যাটারি ব্যবহার করে তিনি গাড়ির ভেতরেই ছিলেন। নিজের সঙ্গে থাকা চকলেট, স্ন্যাকস ও বিস্কুট খেয়ে বেঁচে ছিলেন। পানির তৃষ্ণা পেলে গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে তুষার খেয়ে নিতেন।
জেরি জুরেটের নাতি ক্রিশ্চিয়ান বলেন, তৃতীয় দিনে বৈদ্যুতিক জানালায় ঢোকার সময় গাড়ির ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়। এ কারণে গাড়ির জানালা কয়েক ইঞ্চি খোলা ছিল। হিম তুষারের মাঝে তা আর বন্ধ করা যাচ্ছিল না।
চতুর্থ দিন ইনয়ো কাউন্টি শেরিফের অফিসে তাঁর সন্ধান চেয়ে অভিযোগ জানানো হয়। তবে ভারী তুষারের কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধারকারী দল দ্রুত অভিযান শুরু করতে পারেনি। আটকা পড়ার ষষ্ঠ দিনে জেরির মুঠোফোন থেকে একটি খুদেবার্তা পান উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ। পরে তাঁকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া হাইওয়ে প্যাট্রোল বিমান জেরির গাড়িটিকে প্রায় তিন ফুট তুষারে নিচে চাপা পড়া দেখতে পায়। পরে সেখান থেকে জেরিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে কয়েকঘণ্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কিন্তু তাঁর হাইপোথার্মিয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
জেরি জুরেটের নাতি বলেন, এমন ভারী তুষারের মাঝে টানা ছয় দিন আটকা পড়ে কীভাবে তিনি বেঁচে ছিলেন তা শুনে নার্সরা হতবাক হয়েছিলেন। তিনি এখন পুরো সুস্থ আছেন।