সুনামির ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে গেল হাওয়াইয়ের দাবানল, মৃত বেড়ে ৬৭
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ দাবানলে মৃত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার নিহত মানুষের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।
হাওয়াইয়ের ইতিহাসে এর আগে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত বেশি প্রাণহানি ঘটেনি। অঙ্গরাজ্যটির বিগ আইল্যান্ডে ১৯৬০ সালে আঘাত হানা ভয়াবহ সুনামিতে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
হাওয়াইয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্যোগে পরিণত হওয়া এই দাবানলে মৃত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে অঙ্গরাজ্যটির মাউই দ্বীপে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগে স্থানীয় লোকজনকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
৮ আগস্ট মাউই দ্বীপের পশ্চিম উপকূলীয় জঙ্গলে দাবানল শুরু হয়। কাছেই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাসের কারণে দাবানলের তীব্রতা বেড়ে যায়। দ্রুত সেটি সমুদ্রতীরবর্তী শহর লাহাইনায় ছড়িয়ে পড়ে।
দাবানলে অন্তত এক হাজার ভবন পুড়ে গেছে। হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, দাবানলের এলাকায় লাশ শনাক্তকারী কুকুর সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালালে আরও মরদেহ পাওয়া যেতে পারে।
হাওয়াইয়ের সিনেটর ব্রায়ান শাটজ সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসিকে বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া অবকাঠামোগুলোতে কেউ এখনো যায়নি। আমার আশঙ্কা, সেখানে কাজ শুরু হলে মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
পরে সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সিনেটর বলেন, ‘লাহাইনাকে দেখে মনে হচ্ছে, এটি একটি বোমাবিধ্বস্ত শহর।’
মাউই কাউন্টি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, লাহাইনাতে এখনো আগুন জ্বলছে। তবে এই দাবানলের ৮৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ছাড়া মাউই দ্বীপে আরও দুটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া দাবানলের একটির ৮০ ভাগ ও অন্যটির ৫০ ভাগ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
মাউই দ্বীপে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগে স্থানীয় লোকজনকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষের বসতবাড়িতে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আগে তাঁদের কতটা সতর্ক করা হয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হলে মাউইতে জরুরি সতর্কসংকেত বাজানো হয়ে থাকে। তবে এবার দাবানলের সময় তা বাজাতে শোনা যায়নি।
সতর্কসংকেতের প্রসঙ্গ টেনে হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, কী ঘটেছে, তা জানতে মাউই কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে কিংবা ই–মেইল করে দাবানল নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষ কিছু বলেনি গভর্নর গ্রিনকে।
তবে মাউই কাউন্টির ফায়ার সার্ভিস বিভাগের প্রধান ব্র্যাডফোর্ড ১০ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগুন এত দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছিল যে তা নিয়ন্ত্রণে নিযুক্ত কর্মীরা জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তিনি মনে করেন, এ কারণে যথাসময়ে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হয়নি।