২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কমলা হ্যারিসের ভুলগুলো কী ছিল

কমলা হ্যারিসফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে গেছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস। কেন হোয়াইট হাউসের দৌড়ে ট্রাম্পকে ঠেকাতে পারলেন না কমলা, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন কারণ ও ভুলের কথা বলছেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো—অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভিবাসন ও কমলার দেরিতে প্রার্থী হওয়া।

অর্থনৈতিক অস্থিরতা

১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটনের জয়ী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডেমোক্রেটিক দলের কৌশল নির্ধারণকারী জেমস কারভিলে আগের সরকারের মেয়াদে অর্থনৈতিক স্থবিরতার কথা বলেছিলেন।

ওই ঘটনার ৩০ বছর পর একই কারণে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিদায়ী প্রশাসন মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানতে না পারায় কমলা মার্কিন ভোটারদের ভোট জিততে পারেননি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তথ্য–উপাত্তগুলোর ক্রমাগত উন্নতি হলেও বিভিন্ন জরিপে ভোটারদের হতাশা দেখা গেছে। ট্রাম্পও এর সুযোগ নিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী সমাবেশে অবিরত দ্রব্যমূল্য ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলে গেছেন।

অলাভজনক থিঙ্কট্যাংক অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের বার্নার্ড ইয়ারস বলেন, জনগণ এখনো মূল্যস্ফীতিকে সমস্যা হিসেবে দেখেন। কারণ, তাঁরা অর্থনীতিবিদদের মতো কয়েক বছরের হার নিয়ে পর্যালোচনা করেন না, বরং তাঁরা দাম নিয়ে ভাবেন।

এএফপিকে ইয়ারস বলেন, পরিবারের জন্য বরাদ্দের একটা বড় অংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই খরচ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি হয়তো মানুষকে হতাশ করেছে।

অভিবাসীদের ঢেউ

ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ড স্কুল অব ল-এর অধ্যাপক কার্ল টোবিয়াস মনে করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে অভিবাসন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাইডেন-কমলা প্রশাসনের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে আসা লাখ লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার জন্য বড় ধরনের অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।

বাইডেন একটি কঠোর নির্বাহী আদেশ জারি করার পর সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার ঘটনা কমেছে। তবে আদেশটি জারি হওয়ার আগেই গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। ট্রাম্প ও অন্য রিপাবলিকানরা এর সমালোচনা করেন।

কমলা হ্যারিসের অভিযোগ, রাজনৈতিক স্বার্থে একটি নির্দলীয় সীমান্ত বিল আটকে দিতে ট্রাম্প নির্বাচিত রিপাবলিকানদের প্রভাবিত করেছিলেন।

আর রিপাবলিকানরা বলেছে, সীমান্ত বিলটি যথেষ্ট নয়।

শেষ পর্যন্ত ভোটাররা ট্রাম্প শিবিরের পাশে থেকেছেন।

কমলা হ্যারিস
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জনসমর্থনে পরিবর্তন

প্রাথমিক বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, কমলা হ্যারিস প্রায় ৪০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোট, ৮০ শতাংশের বেশি কৃষ্ণাঙ্গ ভোট এবং হিস্পানিক ও এশীয়দের প্রায় অর্ধেকের ভোট পেয়েছেন।

একই জরিপে দেখা যায়, ট্রাম্প কোনো অ–শ্বেতাঙ্গ গোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না জিততে পারলেও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে তাঁর সমর্থন একক অঙ্কে বেড়েছে। আর হিস্পানিকদের মধ্যে তাঁর সমর্থন বেড়ে দুই অঙ্কের ঘরে ছিল। এই প্রবণতাটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য গভীর উদ্বেগের।

সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্তো সুরো বলেন, ‘আমরা অবশ্যই মেক্সিকোর বংশোদ্ভূত মার্কিন পুরুষদের মধ্যে, ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে, কলেজে পড়াশোনা করেননি এমন মানুষদের মধ্যে, শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখেছি।’

অধ্যাপক রবার্তো সুরো আরও বলেন, ভৌগোলিকভাবে সীমান্ত এলাকা ও নতুন অভিবাসনের ওপর খুব সরাসরি প্রভাব পড়ছে, এমন জায়গাগুলোতেও এমন প্রবণতা দেখা গেছে।

সব ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতি নারীদের সমর্থন বাড়তে দেখা গিয়েছিল। যদিও তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।

নির্বাচনী প্রচারে দেরি

খুব শিগগির বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৮২ বছর হতে যাচ্ছে। শুরুতে বাইডেনই ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর বয়স বেশি হওয়ায় ডেমোক্র্যাট নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তাঁর কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়া হয়নি। তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই হোয়াইট হাউস তা অস্বীকার করত।

জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে ব্যাপকভাবে ধরাশায়ী হওয়ার পর সংকট দেখা দেয়। তাঁর মানসিক অবস্থা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দলীয়ভাবে প্রচণ্ড চাপের মুখে বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।

বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পান। কিন্তু নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে তাঁর হাতে ছিল মাত্র তিন মাস সময়। নির্বাচনে কমলার হেরে যাওয়ার পেছনে এটাকেও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যারি সাবাতো বলেন, ‘ডেমোক্রেটিকদের এ বিপর্যয়ের দায় বেশির ভাগটাই জো বাইডেনের। ৮০-ঊর্ধ্ব বয়সী এই ব্যক্তির নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করা উচিত হয়নি। হ্যারিসকে কম সময়ের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হয়েছে, যা অপর্যাপ্ত ছিল।’

কমলা হ্যারিস
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বাইডেনের বোঝা

বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস নিজেকে বাইডেনের চিন্তাভাবনা থেকে আলাদা প্রমাণ করতে হিমশিম খেয়েছেন। বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার প্রভাবও তাঁর ওপর পড়েছে।

গত ৮ অক্টোবর এবিসির চ্যাট শো ‘দ্য ভিউ’-তে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন। কমলার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি বাইডেনের থেকে আলাদা কী করবেন। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে কমলা বলেছিলেন, ‘মনে আসার মতো কিছুই নেই।’

গত বুধবার সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাবেক উপদেষ্টা ডেভিড অ্যাক্সেলরড বলেন, ডেমোক্রেটিক প্রার্থীর জন্য এ বিষয়টা ‘বিপর্যয়কর’ হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মোটেও সুযোগ হাতছাড়া করেননি। বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসের সাক্ষাৎকারের ক্লিপটি বাজিয়েছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত অনেক নির্বাচনী বিজ্ঞাপনেও বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।