সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ডেমোক্র্যাটদের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের সময় জনগণের উদ্দেশে হাত নাড়েন। ৪ জুলাই, ওয়াশিংটন ডিসিতে।
ছবি: রয়টার্স

ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিচ্ছেন দলের নেতাদের অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলি চালানোর ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ পেরিয়েছে। গত কয়েক দিনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেকটাই মোড় ঘুরে গেছে। এর মধ্যে ট্রাম্পকে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে যেন উদ্ধারকর্তার মতো বরণ করে নেওয়া হলো এবং তাঁর মাথায় দলীয় মনোনয়নের মুকুট পরিয়ে দেওয়া হলো। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দলীয় চাপে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেন।

বাইডেনের এই দুর্দশার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে গত মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর টেলিভিশন বিতর্কে ভালো করতে না পারার বিষয়টিকে। এতে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে দ্রুত ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। বাইডেনের বয়স নিয়ে আগে থেকেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে খোঁচা দেওয়া হচ্ছিল। তিনি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। এর মধ্যে বিতর্কে ভালো করতে না পারায় ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যেই সংশয় আরও গভীরে রূপ নেয়।

ট্রাম্পকে সরাসরি বিতর্কে আহ্বান জানানোর আগে থেকেই নানা জরিপে তাঁর চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন বাইডেন। নির্বাচনী প্রচার আরও বাড়াতে এবং ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে টেলিভিশন বিতর্ককে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন তিনি। কারণ, এটা তাঁর জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবে তিনি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হবেন বলে প্রচার চালান বাইডেন। বিতর্কে তিনি আশা করেছিলেন, ট্রাম্পের স্বরূপ তিনি ভোটারদের সামনে তুলে ধরবেন এবং ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে গেলে কী হতে পারে, তা জানাবেন। কিন্তু বিতর্কে তিনি তাঁর বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেননি। এতে বরং তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাইডেনকে নানা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হয়। তাঁর ঠান্ডা লেগেছিল, তিনি ভ্রমণ করে ক্লান্ত ছিলেন ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারেনি।

ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও অনেকেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন। বাইডেনের খারাপ সময়টাকে তাঁরা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁরা ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচনী প্রচারকে ভিন্ন রূপ দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে মনোবল জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। যেসব ভোটার ভেবেছিলেন আবার তাঁদের পুরোনো দুই ‘বুড়ো’র লড়াই দেখতে হবে, তাঁদের সামনে নতুন বিকল্প হাজির করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। ডেমোক্র্যাটরা নিশ্চিত করেন যে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প ও ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের মধ্যেই আবার নির্বাচনী লড়াই হচ্ছে না। গত রোববার বাইডেন নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে।

ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ১৯ আগস্ট। অর্থাৎ আর চার সপ্তাহ সময় আছে তাদের হাতে। এ সময় কাজে লাগিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীর জন্য নতুন নেতাদের মনোযোগ কাড়ার প্রয়োজন হয়ে উঠবে। তবে দলটির নেতাদের অনেকেই ইতিমধ্যে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছেন এবং নতুন নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। বাইডেনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন এমন অনেকেই তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন লড়াইয়ে তাঁদের দেখা না-ও যেতে পারে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসম, মিশিগানের গভর্নর গ্রেটচেন হুইটমার বা পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জশ শ্যাপিরো।

ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যে তাঁদের প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্পকে ঘিরে কীভাবে দলটি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তা প্রত্যক্ষ করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দলীয় প্রাইমারিতে নির্বাচন করা নিকি হ্যালি সরাসরি তাঁকে সমর্থন করেছেন। রিপাবলিকানরা কেবল তাঁদের প্রার্থীকে সমর্থন করে আটকে নেই, তাঁরা ট্রাম্পকে বরণ করে নিয়েছেন। ট্রাম্প যেভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন, সেভাবে কমলা মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করা যায় না। কারণ, ডেমোক্র্যাটদের অনেকেই কমলাকে এভাবে মেনে নিতে পারবেন না।

তাঁদের চোখে কমলা শুধু বাইডেনের শূন্যতা পূরণ করার মতো একজন। বাইডেনকে সরিয়ে দিতেই কেবল লোকজন তাঁর পেছনে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সব অক্সিজেন ট্রাম্প টেনে নিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে যিনি প্রার্থী হবেন, তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করা। তাঁদের যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেটিকে সুযোগে পরিণত করা। বাইডেন থাকতে যে কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না, নতুন প্রার্থীকে ঘিরে সেগুলো সম্পন্ন করা। বাইডেন তাঁর বিতর্ক ঘিরে যে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে গেছেন, সেই সংকট কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনকে নিজেদের মতো করে রূপ দেওয়া। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে ক্ষমতাসীন একজন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাটদের মধ্য থেকে জয়ী হতে পারেন এমন প্রার্থীকে যেকোনো মূল্যে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু তাঁরা উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে নতুন প্রার্থী বের করে আনার মতো এতটা সাহসী পথে হাঁটবেন বলে মনে হয় না।