ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর মাস্ক কেন মার-এ–লাগোতে ঘন ঘন যাচ্ছেন

নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে জোরেশোরে প্রচার চালিয়েছিলেন ইলন মাস্কছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর প্রযুক্তি খাতের ধনকুবের ইলন মাস্ক ক্রমেই বেশি রাজনৈতিক অঙ্গনের গভীরে ঢুকছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এখনই তাঁকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন তিনি।

ট্রাম্পের নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোয় কারা থাকবেন, সে বিষয়ে নাম প্রস্তাব করছেন মাস্ক। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।

নির্বাচনী প্রচার চলাকালে ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করা একটি সংগঠনে ১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছিলেন মাস্ক। রিপাবলিকানদের হয়ে জোরেশোরে প্রচারও চালিয়েছিলেন তিনি। ৫ নভেম্বর নির্বাচনের দিন থেকে প্রায় দিনই ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের মালিকানাধীন মার-এ-লাগো রিসোর্টে আসা-যাওয়া করছেন মাস্ক। ট্রাম্প ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।  

যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণকারীদের দেশ। শিগগিরই আপনারা ইচ্ছেমতো নির্মাণের সুযোগ পাবেন।
ইলন মাস্ক, টেসলার সিইও

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাতনি কাই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাস্ক ও তাঁর সন্তানের সঙ্গে নিজের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এতে সে লিখেছে, ‘আঙ্কেল সমতুল্য ইলন।’

ট্রাম্প প্রশাসনে কাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত, তা নিয়ে সরব হয়েছেন মাস্ক। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছেন।  

প্রযুক্তিবিষয়ক সাংবাদিক কারা সুয়িশার সিএনএনকে বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (মাস্ক) সব সময় (রাজনীতিতে) নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। এটা তাঁর ধরন।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক
ছবি: রয়টার্স

সুয়িশার আরও বলেন, তিনি ট্রাম্পপন্থী লোকজনের কথাবার্তা শুনেছেন। তাঁরা মাস্কের এমন আচরণে অবাক হচ্ছেন। একে ভালো চোখে দেখছেন না তাঁরা।

সপ্তাহান্তে ও গত সোমবার ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নেতা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ফ্লোরিডার সিনেটর রিক স্কটকে সমর্থন জানিয়েছেন। ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদে কাদের নিয়োগ দেওয়া যায়, তা নিয়ে জনসাধারণের মতামতও জানতে চেয়েছেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনে কাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত, তা নিয়ে সরব হয়েছেন মাস্ক। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনে সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামাস্বামী দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রামাস্বামীর দেওয়া কয়েকটি পোস্ট শেয়ার করেছেন মাস্ক।  

রামাস্বামী তাঁর পোস্টে ট্রাম্প প্রশাসনের আকার ছোট রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। আর রামাস্বামীর এমন পরামর্শের বিষয়ে মাস্ক তাঁর একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘এ বিশাল আমলাতন্ত্র পরিচালনার জন্য যে কঠোর বিধি আছে, তা কাটিয়ে ওঠা এবং প্রশাসনে ছোট আকারে সরকারপক্ষের বিপ্লবীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাই হলো প্রতিবন্ধকতা।’ মার-এ–লাগোতে ট্রাম্পের কাছে মাস্কের আসা–যাওয়ার ঘটনায় এটা বোঝা যাচ্ছে যে রিপাবলিকান এই নেতার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে এই ধনকুবের (মাস্ক) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর বিনিময়ে মাস্ক তাঁর ব্যবসায়িক সুবিধাটা আদায় করে নেবেন।  

ইতিমধ্যে এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরদিন মাস্কের মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশ বেড়েছে। ট্রাম্প চীনা পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক গীতা জোহার দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আমরা তদবিরের চেষ্টা দেখেছি। আমরা দারুণ সব কার্যনির্বাহী রাজনৈতিক কমিটি দেখেছি। তবে এটির ধরন ভিন্ন, যা আমরা আগে কখনো দেখিনি। এ ক্ষেত্রে এমন কিছু লেনদেন হবে, যার মধ্য দিয়ে তিনি (মাস্ক) লাভবান হবেন।’

এর আগে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি মাস্ককে তাঁর প্রশাসনে ‘খরচ কমানোসংক্রান্ত মন্ত্রী’ হিসেবে দায়িত্ব দেবেন। তবে আল–জাজিরার প্রতিনিধি অ্যালান ফিশার বলেছেন, সিনেটের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে কিংবা নিজের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এমন কোনো পদের দায়িত্ব মাস্ক নেবেন বলে মনে হচ্ছে না।

মাস্ক বরং যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু রিবন কমিটিতে কাজ করতে পারেন। আর্থিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্তের কাজ করে এ কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ কমিটিতে মাস্ক কাজ করলে তাঁর অনেক বিষয়ে এখতিয়ার থাকবে ঠিকই, তবে তাঁকে সরকারের নীতি–নৈতিকতাসংক্রান্ত বিধির আওতায় থেকে কাজ করতে হবে না।

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় মাস্ক বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রত্যাহারে জোর চেষ্টা চালাবেন বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ, মাস্ক মনে করেন, এসব বিধিনিষেধের কারণে স্পেসএক্স, টেসলাসহ তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়ের দিনে এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন মাস্ক। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণকারীদের দেশ। শিগগিরই আপনারা ইচ্ছেমতো নির্মাণের সুযোগ পাবেন।’

আরও পড়ুন