চোখ বন্ধ করলেই সেই দিনের ঘটনা ভেসে ওঠে: ট্রাম্পের সমাবেশে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী

রক্তাক্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের কর্মীরা। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার কাউন্টিতে, ১৩ জুলাই ২০২৪ছবি: রয়টার্স

গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার এলাকায় রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সাবেক প্রধান কোরি কমপারেটোর। তাঁর স্ত্রী সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, নিরাপত্তা ব্যর্থতার কারণে তাঁর স্বামী নিহত হওয়ার ঘটনায় তিনি চরমভাবে ক্ষুব্ধ।

ওই সমাবেশে পাশের একটি ভবনের ছাদ থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছিলেন ২০ বছর বয়সী টমাস ক্রুকস। গুলি থেকে পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন কোরি কমপারেটোর। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

কোরি কমপারেটোরের স্ত্রী হেলেন কমপারেটোর জানান, তিনি ওই দিনের ঘটনাগুলো মনে ফিরে আসা এখনো বন্ধ করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘চোখ বন্ধ করলেই ওই দিনের ঘটনা আমার ফিরে ফিরে মনে পড়ছে। আমি ক্রুদ্ধ। কারণ, সেই দিন অনেক ভুল করা হয়েছিল। এমনটি ঘটার কোনো দরকার ছিল না।’

বাটলার এলাকায় যে স্থানে গুলি করা হয়েছিল, সেখানে স্থানীয় সময় শনিবার আবার সমাবেশ করেছেন ট্রাম্প। এর কয়েক দিন আগে হেলেন কমপারেটোর বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন।

সার্ভার এলাকায় কোরির সঙ্গে যে বাসাতে হেলেন থাকতেন, সেটার দূরত্ব বাটলারের সমাবেশস্থল থেকে ৩২ কিলোমিটারের কম। তবে স্বেচ্ছাসেবক অগ্নিনর্বাপক বাহিনীর যে স্টেশনে তিনি কয়েক দশক কাজ করেছিলেন, সেখান থেকে তাঁদের বাসা খুব কাছে। স্টেশনে সাইরেন বাজলেই তাঁদের বাসা থেকে সহজে শোনা যেত।

জুলাইয়ে বাটলারের এই সমাবেশে হামলায় ট্রাম্পের কানে গুলি লেগেছিল। গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী কোরি কমপারেটোর। ‘জীবন বদলে’ দেওয়ার মতো আঘাত পেয়েছিলেন আরও দুজন। তাঁরা হলেন ৫৭ বছর বয়সী ডেভিড ডাচ ও ৭৪ বছর বয়সী জেমস কোপেনহেভার।

পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছিল, ট্রাম্পের ওই সমাবেশের দিন নিরাপত্তায় ঘাটতি ছিল। পরিকল্পনা ছিল দুর্বল ও যোগাযোগ–বিচ্ছিন্নতা ছিল।

স্ত্রী হেলেন জানান, কোরি রিপাবলিকান পার্টির বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বড় সমর্থক ছিলেন। জুলাইয়ের সমাবেশ নিয়ে তিনি বেশ উৎসাহী ছিলেন।

হেলেন বলেন, ‘(ট্রাম্প) সবকিছু যেভাবে শেষ করতেন, তা তিনি খুব পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন না।’

হেলেন বিশ্বাস করেন, বাটলারের মতো এলাকায় তাঁদের মতো বসবাসকারী মানুষের জীবন বুঝতে পারেন ট্রাম্প। পিটসবার্গ শহরের উত্তরে অবস্থিত বাটলার এলাকায় বসবাসকারীদের বড় অংশই শ্রমিকশ্রেণির মানুষ।

কোরি নিহত হওয়ার আগের মাসগুলোয় এই দম্পতি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিজেদের নৌকায় কাটিয়েছেন। হেলেন বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে সময় কাটাতে ভালো বাসতাম। আমরা সবকিছু নিয়ে কথা বলেছি। নৌকায় বসে আমরা ভবিষ্যতের অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম।’

কোরি কমপারেটোর ও তাঁর স্ত্রী হেলেন কমপারেটোর। গত জুলাইয়ে পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলারে ট্রাম্পের সমাবেশে গুলিতে নিহত হন কোরি
ছবি: হেলেন কমপারেটোরের ফেসবুক থেকে নেওয়া

এই দম্পতি বলতে গেলে সারাটি জীবন ধরেই পরস্পরকে চেনেন। তাঁরা একই সঙ্গে কিন্ডারগার্টেনে পড়েছেন।

হেলেন জানান, তাঁর স্বামীকে প্রায় সময় গম্ভীর দেখাত। কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন গভীর দয়ালু ও স্নেহশীল মানুষ। তিনি বলেন, ‘সে হাসলেই আপনি বুঝে যেতেন যে সে একজন ভালো মানুষ। সে তার সমাজের জন্য যেকোনো কিছু করত। সে তার সন্তানদের ভালোবাসত। সন্তানেরাই ছিল তার সবকিছু।’

এই দম্পতির অ্যালিসন ও কেইলি নামের দুই কন্যা রয়েছেন। দুজনই নার্স। পিতৃশোকে তাঁরা মুহ্যমান। তাঁরা কাজে ফিরতে চেষ্টা করছেন।

কোরি কমপারেটোরকে জুলাই মাসে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে (আরএনিস) সম্মাননা জানানো হয়েছে। সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তৃতার সময় তাঁর হেলমেট ও কোট মঞ্চে প্রদর্শন করা হয়েছে।

হেলেন বলেন, বাটলারে জুলাই মাসের সমাবেশে কোরি কিছুটা আশা ও কিছুটা মজা করে বলেছিলেন—ট্রাম্প তাঁকে মঞ্চে ডেকে নিতে পারেন।

রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কোরিকে সম্মান জানানোর বিষয়টি হেলেনকে আগেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপর তাঁর পরিবার আরএনসি সম্মেলন টেলিভিশনে দেখেছেন। হেলেন বলেন, ‘আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। কারণ, শেষ পর্যন্ত তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে মঞ্চে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। এটা ছিল একধরনের সুন্দর মুহূর্ত। একই সঙ্গে তা দুঃখেরও।’