রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যে পরিকল্পনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়া। ২০১৫ সালে ট্রাম্প যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হলেন, তখন থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার শুরু। একটা অভিযোগ রয়েছে, সে বছর নির্বাচনে জয় পেতে ট্রাম্পকে সাহায্য করেছিল ক্রেমলিন।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হয়েছেন ট্রাম্প। বারবার তিনি একটি দাবি করে আসছেন যে খুব দ্রুত রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন তিনি। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা এখনো খোলাসা করেননি।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্স। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের ভূমিকা কী হতে পারে, এক ‘পডকাস্টে’ সে বিষয়ে কিছুটা জানিয়েছেন তিনি। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী রয়েছে ওই পরিকল্পনায়।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান
ইউক্রেন যু্দ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি যেসব নীতি হাতে নিয়েছে, তার কড়া সমালোচনা করে আসছেন ট্রাম্প। তাঁর মতে, এই যুদ্ধে তহবিল ও অস্ত্র সরবরাহের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ফায়দা হবে না।
ট্রাম্পের একটি বড় দাবি হচ্ছে, ২০২০ সালে তিনি যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেতেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না। এই যুদ্ধ ‘২৪ ঘণ্টায়’ থামাতে পারবেন বলেও উঁচু গলায় কথা বলেছেন তিনি। তবে এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তুলে ধরেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্পের রানিং মেট জেডি ভ্যান্সের মতে, ইউক্রেনীয়দের মধ্যেও দুর্নীতির অনেক সমস্যা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে গত সপ্তাহে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বির্তকে মুখোমুখি হন ট্রাম্প। সেখানেও তিনি বলেছিলেন, নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি যদি জয় পান, তাহলে জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট পদে বসার আগেই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।
আর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে টাম্প বলেছেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ কীভাবে থামানো যায়, সে বিষয়ে আমার কাছে একটি চমৎকার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আমি ওই পরিকল্পনা আপনাদের কাছে প্রকাশ করব না। কারণ, প্রকাশ করলে সেগুলো পরে ব্যবহার করতে পারব না।’
পরিকল্পনাটি কী
ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশে অপারগতা জানালেও তাঁর রানিং মেট জেডি ভ্যান্স কিন্তু এ বিষয়ে অতটা চাপা নন। তিনি বলেন, নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হলে একটি ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের’ লক্ষ্যে ক্রেমলিন, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন ট্রাম্প।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বর্তমানে যে সীমারেখা রয়েছে, তাকে বেসামরিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ভ্যান্স। তবে ওই অঞ্চল কোথায় হবে, তা উল্লেখ করেননি। এটুকু বলেছেন, অঞ্চলটি ‘এতটাই সুরক্ষিত থাকবে যে রাশিয়া আর অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।
আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স আরও বলেন, ইউক্রেন তাদের সার্বভৌমত্ব ধরে রাখবে। আর রাশিয়াও কিয়েভের কাছ থেকে নিরপেক্ষ থাকার এই নিশ্চয়তা পাবে যে তারা ন্যাটো বা অন্য কোনো জোটে যোগ দেবে না। সমঝোতাটা শেষ পর্যন্ত এমনটাই হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মেরিন সদস্য জেডি ভ্যান্স। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধকে ‘ভালো ও খারাপের’ যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করার পক্ষে রিপাবলিকান এই নেতা। তাঁর মতেত, রাশিয়ার ইউক্রেনে অভিযান চালানো উচিত হয়নি। আবার ইউক্রেনীয়দের মধ্যেও দুর্নীতির অনেক সমস্যা রয়েছে।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার অর্থ কী
ট্রাম্পের যে পরিকল্পনা তাঁর রানিং মেট তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গির বেশ মিল রয়েছে। যেমন ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বর্তমান সীমারেখা ধরে রাখার কথা বলেছেন। এর অর্থ, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলে থাকা কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হবে কিয়েভকে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর দেশটির বেশ কয়েকটি অঞ্চল নিজেদের দখলে নেয়। একপর্যায়ে গণভোটের মাধ্যমে লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এসব অঞ্চলে প্রশাসনিক কাজে নিজেদের অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছে ক্রেমলিন।
ট্রাম্পের মতো চিন্তভাবনা ‘কল্পনার রাজ্যেই হয়’দিমিত্রি পেসকভ, ক্রেমলিনের মুখপাত্র
২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা দখল করেছে রাশিয়া। মস্কোর ভাষ্য, কোনো শান্তি পরিকল্পনায় ‘যুদ্ধক্ষেত্রে যে বাস্তবতা’, তার স্বীকৃতি দিতে হবে। অপর দিকে ইউক্রেনের দাবি, ক্রিমিয়া উপদ্বীপসহ ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করেছে, সেগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে।
রাশিয়া কী বলছে
আসন্ন ভবিষ্যতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন, তা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি বলেন, এ ধরনের চিন্তভাবনা ‘কল্পনার রাজ্যেই হয়’।
এদিকে আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, কমলাকে ‘সমর্থন’ করে মস্কো। হয়তো তিনি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেবেন না।