২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দোদুল্যমান রাজ্যই গড়ে দেবে ট্রাম্প–কমলার ভাগ্য

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হবে আগামী ৫ নভেম্বর। অবশ্য ইতিমধ্যে কিছু অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট প্রদান শুরু হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দ্বিদলীয় প্রাধান্য রয়ে গেছে। আলাদাভাবে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির ভোটব্যাংক রয়েছে বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যে। মূলত কিছু দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য প্রার্থীদের জয়-পরাজয় ঠিক করে দেয়, যেগুলো ‘সুইং স্টেট’ বা ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে পরিচিত।

শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় এসব অঙ্গরাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজনের পক্ষে প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে ট্রাম্প–সমর্থক ইলন মাস্কের মতো ধনকুবের। পছন্দের প্রার্থীর জন্য প্রচারণায় নেমেছেন তারকারাও। সর্বশেষ জরিপগুলোর তথ্যমতে, দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য কয়টা, কেন গুরুত্বপূর্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য সাতটি। এদের ‘সেভেন সিস্টার্স’ও বলা হয়। অঙ্গরাজ্যগুলো হলো অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন।

যেসব অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে, সেগুলোতে জয়-পরাজয় আগে থেকেই অনেকটা বোঝা যায়। ফলে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোই শেষ পর্যন্ত প্রার্থীর চূড়ান্ত জয়-পরাজয় নির্ধারক হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটাররা যে প্রার্থীদের দিকে ঝোঁকেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট হন। এ জন্য আলাদা গুরুত্ব দিয়ে এসব অঙ্গরাজ্যে প্রচার চালিয়ে থাকেন প্রার্থীরা।

অ্যারিজোনা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ইলেকটোরাল ভোটে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়। পপুলার ভোটে প্রার্থীরা যে অঙ্গরাজ্যে জয় পান, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সেই অঙ্গরাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল ভোট তিনি পান। মোট ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট হন।

অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১১টি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পান ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে ২০২০ সালের নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে এই অঙ্গরাজ্যে জয় ছিনিয়ে নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফলে এবারের নির্বাচনেও এই অঙ্গরাজ্যের ওপর সবার নজর থাকছে।

অ্যারিজোনার বাসিন্দাদের মধ্যে জাতিগত বৈচিত্র্য আছে। যদিও সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ, ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এই অঙ্গরাজ্যের ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী হিসপানিক। এ ছাড়া রয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান আর ৫ দশমিক ২ শতাংশ ভারতীয় ও আলাস্কা বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠী। সাধারণত হিসপানিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ডেমোক্র্যাটরা জনপ্রিয়। তবে জরিপ অনুযায়ী, শেষে দিকে এসে তাঁদের সমর্থনও টানতে পারছেন ট্রাম্প।

আরও পড়ুন

জর্জিয়া

জর্জিয়ার ইলেকটোরাল ভোট ১৬টি। সাধারণত এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী জয় পেয়ে থাকেন। তবে ২০২০ সালে এখানে জয় পান বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এর আগে সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে বিল ক্লিনটন এই অঙ্গরাজ্যে জয়ী হয়েছেন। বাইডেনের জয়ের ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।

এই অঙ্গরাজ্যে নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এখনকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (৩৩ দশমিক ২ শতাংশ) জনগোষ্ঠী কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান। এ ছাড়া ১১ দশমিক ১ শতাংশ হিসপানিক আর ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এশীয় বংশোদ্ভূত।

আরও পড়ুন

মিশিগান

এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৫টি। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এই অঙ্গরাজ্যে বেশির ভাগ সময় ডেমোক্র্যাটরা জয় পেয়েছেন। তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পান ট্রাম্প। সাম্প্রতিক জরিপে এই অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা অর্থনীতিকে গুরুত্ব দেওয়ায় এবারও অঙ্গরাজ্যটির হাতবদলের সম্ভাবনা রয়েছে।

এই অঙ্গরাজ্যের ৭৩ দশমিক ৭ শতাংশ জনগোষ্ঠীই নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। এর পরেই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী, যা প্রায় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। হিসপানিক জনসংখ্যা ৬ শতাংশের মতো। এ ছাড়া রয়েছেন আরব-আমেরিকান বাসিন্দা। গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারায় ডেমোক্র্যাটরা আরব-আমেরিকান ভোট হারাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

নেভাদা

সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যের মধ্যে নেভাদায় ইলেকটোরাল ভোট সবচেয়ে কম, মাত্র ছয়টি। এরপরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই অঙ্গরাজ্যের গুরুত্ব কমে না। ২০২০ সালে বাইডেনের জয়ে টানা চারবারের মতো এই অঙ্গরাজ্য ডেমোক্র্যাটদের দখলে ছিল। তবে ২০১৬ সালের চেয়ে ব্যবধান কম ছিল।

এই অঙ্গরাজ্যের জনগোষ্ঠী বৈচিত্র্যময়। ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, এখানকার ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। হিসপানিক ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান, ১১ শতাংশ। এশীয় জনগোষ্ঠী ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

নর্থ ক্যারোলাইনা

এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৬টি। নর্থ ক্যারোলাইনা রিপাবলিকানদের পক্ষে থাকতে পারে বলে মত যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিশ্লেষকদের। প্রেসিডেন্ট পদে হারলেও ২০২০ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটে এই অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন ট্রাম্প।

নর্থ ক্যারোলাইনার ৬১ শতাংশ জনগোষ্ঠীই নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। তবে এই অঙ্গরাজ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দাও রয়েছেন, ২২ দশমিক ১ শতাংশ। আর নন-হিসপানিক বাসিন্দা ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।

পেনসিলভানিয়া

এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১৯টি, যা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উভয় প্রার্থীর বিশেষ নজর এই অঙ্গরাজ্যের প্রতি। ২০১৬ সালে পেনসিলভানিয়ায় জয় পেয়েছেন ট্রাম্প। তবে ২০২০ সালে ১ দশমিক ২ শতাংশ ব্যবধানে এই রাজ্যে জয় ছিনিয়ে নেন বাইডেন।

পেনসিলভানিয়ার ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান জনগোষ্ঠী ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর হিসপানিক জনগোষ্ঠী রয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশের মতো।

আরও পড়ুন

উইসকনসিন

এই অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট ১০টি। একসময় এ অঙ্গরাজ্যটিকে ডেমোক্র্যাট ভোটব্যাংক মনে করা হতো। তবে ২০১৬ সালে জয় ছিনিয়ে নিয়ে উইসকনসিনকে দোদুল্যমান রাজ্যের কাতারে নিয়ে আসেন ট্রাম্প।

উইসকনসিনের ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী নন-হিসপানিক শ্বেতাঙ্গ। এর পরে রয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ হিসপানিক জনগোষ্ঠী। কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রো-আমেরিকান ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।