ট্রাম্প জিতলে সেই লাইথাইজারের হাত ধরে ফিরতে পারে বাণিজ্যযুদ্ধ

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা রবার্ট লাইথাইজারছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মঙ্গলবারের বাণিজ্য সভাগুলোতে মতাদর্শিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে যে হুলুস্থুল ঘটনা ঘটত, সম্ভবত হোয়াইট হাউসের আরও কোথাও সেটা এতটা অশোভন ছিল না। হোয়াইট হাউসের কর্মীরা বিষয়টিকে ‘ফুড ফাইটস তথা চরম বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর মাসগুলোতে জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো, অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন ও জাতীয় অর্থনৈতিক পর্ষদের প্রধান গ্যারি কোহনের মতো চরম চীনবিরোধীদের মধ্যে ক্রমেই হট্টগোলপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছিল। ওভাল অফিসে এ ধরনের একটি বৈঠকে কোহন নাভারোর ওপর চড়াও হন বলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কোহন।

এরপর ২০১৭ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি হিসেবে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যুক্ত হন রবার্ট লাইথাইজার। তিনি একজন আন্তর্জাতিক আইনজীবী, যিনি মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত মামলায় লড়ে থাকেন। তিনি এসে মঙ্গলবারের সভাগুলোতে বাগ্‌যুদ্ধের মাত্রা কমিয়ে আনেন বলে জানান ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক ডেপুটি উপদেষ্টা চার্লি কুপারম্যান।

ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কিত আইনের বিষয়ে জানাশোনা থাকার ফলে লাইথাইজার কাজটি করতে সক্ষম হন। তিনি দুই মেরুতে থাকা মুনচিন ও নাভারোকে মাঝামাঝি অবস্থানে নিয়ে আসেন।

ট্রাম্প যদি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে ৭৭ বছর বয়সী লাইথাইজারকে সম্ভাব্য অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী কিংবা শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে ভাবা হচ্ছে। সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতির জন্য তাঁর সুদীর্ঘ পরিচিতি রয়েছে।

লাইথাইজারের আনুষ্ঠানিক ভূমিকা যা-ই হোক, ট্রাম্পের উদ্ভট আবেগকে দূরে সরিয়ে রেখে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি তাঁর ওপরই সম্ভবত বর্তাবে। আর সেটা হলো, চীনের মতো অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীর পাশাপাশি অনেক বন্ধুপ্রতিম দেশের ওপর কঠোর শুল্কারোপের মাধ্যমে আমেরিকার শিল্পোৎপাদন বাড়ানো।

লাইথাইজার ইতিমধ্যে ওয়াল স্ট্রিটের আর্থিক খাতের কর্মকর্তাদের বলে দিয়েছেন, ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে জিতলে এর পরপরই নতুন করে ব্যাপক হারে শুল্কারোপ করা হবে।

অনেক অর্থনীতিবিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস বলছেন, ট্রাম্পের প্রচারশিবির চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি আমদানি শুল্ক এবং অন্যসব আমদানি পণ্যের ওপর ১০-২০ শতাংশ হারে যে শুল্কারোপের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তা বাস্তবায়িত হলে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, অর্থনীতি সংকুচিত হবে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের আয়কর থেকে আয়ের জায়গাটি শুল্ক রাজস্ব দিয়ে পূরণের চিন্তা অবাস্তব। আর এটি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও পড়ুন
বাণিজ্যযুদ্ধ শিথিল করতে ২০২০ সালে চুক্তি স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন
ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সম্ভাব্য অনেক উপদেষ্টাদের মতো নন লাইথাইজার। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এই নিবন্ধের জন্য বক্তব্য নেওয়া অর্ধ ডজন ব্যক্তি বলেছেন, তিনি পরিপক্ব ও বুদ্ধিমান মানুষ। কিন্তু লাইথাইজারের সুরক্ষাবাদী বাণিজ্যনীতির প্রতি আগ্রহী হওয়ার অর্থ হলো, তাঁর নেতার অনেক বাড়াবাড়িকে উপেক্ষা করা।

লাইথাইজার ২০১১ সালে ট্রাম্পের বাণিজ্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে একটি মতামত নিবন্ধ লিখেছিলেন, যখন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জন্মস্থান নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছিলেন। উপদেষ্টা থাকার সময় তিনি উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি নতুন করে লেখার জন্য আলোচনা করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রে আরও গাড়ি উৎপাদন করা, যখন কংগ্রেস প্রথমবার ট্রাম্পকে অভিশংসন করছিল। লাইথাইজার এ বছর ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের একজন উপদেষ্টা। যদিও কয়েকজন সাবেক সহকর্মী বলেছেন, তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত ছিলেন।

এই নিবন্ধের জন্য বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান লাইথাইজার। এ খুদে বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এই নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত, আমাকে নয়।’ খুদে বার্তায় ৬ জানুয়ারির হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

আরও পড়ুন