বাইডেন-ট্রাম্প বিতর্ক: পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিভক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে এ বিতর্কে বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে দুই নেতার অবস্থানের ওপর নজর থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দুটি মুখোমুখি বিতর্কের বিষয়ে একমত হয়েছেন বাইডেন ও ট্রাম্প। দুটি বিতর্কের আয়োজক সিএনএন ও এবিসি। আজ বৃহস্পতিবার সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। আর দ্বিতীয় বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর।
কিছু মৌলিক বিষয়ে বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনেরই অবস্থান অভিন্ন। যেমন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই প্রেসিডেন্টের অবস্থানই ছিল অনমনীয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা বিরল। ‘সবার আগে আমেরিকা’ প্রচার চালিয়ে ক্ষমতায় আসা ট্রাম্প তাঁর ২০১৭-২১ মেয়াদে অনেকটাই বিশ্বব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার নীতি নেন। অন্যদিকে বৈশ্বিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার করে ‘আমেরিকার প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২১ সালে ক্ষমতায় আসেন বাইডেন।
কিছু মৌলিক বিষয়ে বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনেরই অবস্থান অভিন্ন। যেমন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই প্রেসিডেন্টের অবস্থানই ছিল অনমনীয়। তাঁরা মনে করছিলেন যে দেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে মার্কিনদের রক্তক্ষয় ও অর্থ ব্যয়ের কোনো মানে নেই।
তবে অধিকাংশ বিষয়ে দুই নেতার অবস্থানে বৈপরীত্য রয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে পরস্পরের সমালোচনা করে আসছেন দুজন।
ইউক্রেন-ইসরায়েল-চীন প্রশ্ন
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাইডেনের উদ্যোগে অস্ত্র ও বাজেট–সহায়তা হিসেবে কিয়েভের জন্য ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস।
তবে ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধে রাশিয়া জিতবে। তাঁর সমর্থকেরা ইউক্রেনের জন্য প্রস্তাবিত শেষ সামরিক সহায়তা প্যাকেজ কয়েক মাস কংগ্রেসে আটকে রাখে। প্রেসিডেন্ট হলে এ যুদ্ধ ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্ধ করার সামর্থ্য রাখেন’ বলেও দাবি করেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকাল ইসরায়েলকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যান ট্রাম্প। তিনি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন এবং মার্কিন দূতাবাস সেখানে সরিয়ে নেন। পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চান ফিলিস্তিনিরাও।
বাইডেনও নিজেকে ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দাবি করে আসছেন। তবে গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনি হত্যার ঘটনায় দুই হাজার পাউন্ড ওজনের বোমার একটি চালান আটকে দেওয়া নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়।
চীন, উত্তর কোরিয়া ও তাদের মিত্রদের বিষয়ে ট্রাম্প ও বাইডেনের অবস্থান অভিন্ন। দুজনই বেইজিংকে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখেন। তবে চীনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসনের মাত্রাগত কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
ট্রাম্প ফিরলে ক্ষতি অর্থনীতির
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও মূল্যস্ফীতি ফিরে আসবে বলে সতর্ক করেছেন ১৬ জন নোবেল পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ। এক চিঠিতে এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন তাঁরা।
গত মঙ্গলবার এ চিঠি প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে ওই অর্থনীতিবিদেরা বলেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প জিতলে তিনি ‘আর্থিকভাবে দায়িত্বহীন বাজেটের’ মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা উসকে দিতে ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি ফিরিয়ে আনতে পারেন।
অর্থনীতিবিদেরা আরও বলেন, অর্থনৈতিক সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের মধ্যে রয়েছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিশ্চয়তা। অন্যান্য দেশের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে আবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো দেশের জন্য আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করা এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখাও অপরিহার্য।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর পদক্ষেপ ও নীতির অস্পষ্টতা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে হুমকিতে ফেলবে।
অর্থনীতিবিদেরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বর্তমান বাইডেনের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে মার্কিন শ্রমবাজারের পুনরুত্থান উল্লেখ করার মতো দৃঢ় ও যথাযথ হয়েছে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদেরা বলেন, ‘যদিও অনেক অর্থনৈতিক নীতির সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আমাদের প্রত্যেকের আলাদা মত রয়েছে, কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা একমত যে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি অনেক ভালো।’
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট এক্সিওসে প্রথম এ চিঠির বিষয়ে খবর প্রকাশ করা হয়। যে কয়জন নোবেলজয়ী ব্যক্তি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের মধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিৎজ, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট শিলার ও স্যার অ্যানগাস ডিটনও রয়েছেন। তবে অর্থনীতিবিদেরা যা-ই বলুন, বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, সম্ভাব্য ভোটাররা অবশ্য বরাবরই ট্রাম্পকে অর্থনীতির জন্য বেশি আস্থাশীল বলছেন।