ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটার ভালোবাসেন। ২০১৭ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন, টুইটার ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না।
সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় এই মাধ্যম সম্পর্কে তখন ট্রাম্পের মূল্যায়ন ছিল এমন—টুইটার তাঁর জন্য একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। কারণ, তিনি টুইটারের মাধ্যমে তাঁর কথা প্রকাশ করেন। যদি তাঁর কাছে কথা প্রকাশের এমন একটি সৎ উপায় না থাকত, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না।
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প। কিন্তু তিনি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। নির্বাচনে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান।
মার্কিন কংগ্রেসে এই নির্বাচনের ফলাফলের সত্যায়ন ঠেকাতে ট্রাম্প তাঁর উগ্র সমর্থকদের উসকানি দেন। ট্রাম্পের উসকানিতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে সহিংস হামলা হয়। এই হামলার জেরে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় টুইটার।
সম্প্রতি টুইটারের মালিকানার পরিবর্তন হয়েছে। টুইটারের নতুন মালিক হয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট তাঁর অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়ামাত্রই টুইটারে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। কিন্তু তেমনটা হয়নি। তিনি এখন পর্যন্ত টুইটারে ফেরার সুযোগ গ্রহণ করেননি। উল্টো তিনি বলেছেন, টুইটারে ফিরে আসার কোনো আগ্রহ তাঁর নেই।
কিন্তু কেন?
প্রশ্নটির উত্তর একমাত্র ট্রাম্পই নিশ্চিতভাবে জানেন। তবে এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর কী হতে পারে, তা খতিয়ে দেখেছেন বিবিসির উত্তর আমেরিকার প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিবেদক জেমস ক্লেটন।
জেমস বলেন, ট্রাম্প এখন টুইটারে ফিরলে তাঁকে অনেক অর্থ হারাতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক জোশ টাকার বলেন, এখন ট্রাম্পের টুইটারে না ফেরার সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর সিদ্ধান্তের এটাই সম্ভবত সরলতম ব্যাখ্যা।
ট্রাম্পকে টুইটারে নিষিদ্ধ করার পর তিনি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নামে নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। এই প্ল্যাটফর্ম অনেকটা টুইটারের মতো।
যে আর্থিক কারণে ট্রাম্প এখনই টুইটারে ফিরছেন না, তা বোঝার জন্য ট্রুথ সোশ্যালের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বোঝা জরুরি।
ট্রুথ সোশ্যালের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের নাম ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (টিএমটিজি)। কোম্পানিটি গত বছর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশন করপোরেশন (ডিডব্লিউএসি) নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।
স্টক এক্সচেঞ্জে থাকা ডিডব্লিউএসি একটি কাগুজে কোম্পানি। এটি ‘স্পেশাল পারপাস অ্যাকুইজিশন কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত।
টিএমটিজি ও ডিডব্লিউএসি উভয়ই একীভূত হতে সম্মত হয়েছে। তবে এ-সংক্রান্ত চুক্তি এখনো সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও ডিডব্লিউএসিতে বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের ধারণা, চুক্তিটি হবে। ডিডব্লিউএসির বর্তমান মূল্য দেখানো হয়েছে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
স্পেশাল পারপাস অ্যাকুইজিশন কোম্পানি বিষয়ের বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওহলরগ বলেন, একীভূত কোম্পানির মূল্য হতে পারে তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প সম্ভবত কোম্পানিটির ৭০ বা ৮০ শতাংশের মালিক হবেন।
যদি সবকিছু ঠিকঠাকভা সম্পন্ন হয়, তবে এটি হবে ট্রাম্পের ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল ব্যবসায়িক উদ্যোগ।
কিন্তু কোম্পানির স্টকের উচ্চ দাম ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি হলো, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাঁর ট্রু সোশ্যালে থাকতে হবে।
ট্রাম্প ছাড়া ট্রুথ সোশ্যালের অবস্থা কী হবে, তা বোঝা এখন কঠিন। কারণ, সামাজিক যোগাযোগের এই প্ল্যাটফর্ম তাঁরই তৈরি। এখন তিনিই যদি অন্য কোথাও যান, পোস্ট দেন, তাহলে তাঁর সমর্থকেরা কেন ট্রুথ সোশ্যাল ব্যবহার করবেন?
ট্রুথ সোশ্যাল ইতিমধ্যে ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। অ্যানালিটিক্স ফার্ম সিমিলার ওয়েবের হিসাবমতে, ট্রুথ সোশ্যালে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ৮ মিলিয়ন সাইট ভিজিট ছিল। জুলাই মাসে তা ছিল ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন। একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য এই সংখ্যা খুবই কম।
অপরদিকে, সিমিলার ওয়েবের হিসাবমতে, গত সেপ্টেম্বর মাসে টুইটারে সাইট ভিজিট ছিল ৯ বিলিয়ন।
এখন ট্রাম্প যদি পোস্ট বন্ধ করে দেন বা অন্য কোথাও করেন, তাহলে ডিডব্লিউএসির শেয়ারের দাম পড়ে যেতে পারে। কোম্পানিটি বিপুল শেয়ারমূল্য হারাতে পারে।
তা ছাড়া ডিডব্লিউএসির সঙ্গে টিএমটিজির প্রস্তাবিত একীভূতকরণ চুক্তিতে একটি আইনি ধারা রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সাধারণত ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দিতে বাধ্য। তিনি ছয় ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একই পোস্ট দিতে পারবেন না। অর্থাৎ, এখানে ট্রাম্পের জন্য একটি আইনগত বাধ্যবাধকতার বিষয়ও থাকছে। যা লঙ্ঘনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার ঝুঁকি তৈরি হবে।
বিবিসির প্রতিবেদক জেমসের মতে, ট্রাম্প এখন একটি বিপাকে পড়েছেন। তিনি হয়তো টুইটারে ফিরে যেতে চান। কিন্তু বিশেষ করে আর্থিক দিক ভেবে তিনি তা করছেন না।