সাগরে চীনা ‘নজরদারি’ বেলুনের ধ্বংসাবশেষ খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় শনাক্ত হওয়ার পর যুদ্ধবিমান দিয়ে ধ্বংস করা সন্দেহজনক চীনা নজরদারি বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। গতকাল রোববার মার্কিন সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে।
বেলুনটি কয়েক দিন ধরে উত্তর আমেরিকার আকাশসীমায় উড়ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, বেলুনটি তাদের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় নজরদারি করছিল। বেলুনটিকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, গত শনিবার এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করেছে তারা। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়েছে।
উত্তর আমেরিকার অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড ও ইউএস নর্দান কমান্ড জেনারেল গ্লেন ভ্যানহার্ক বলেন, মার্কিন নৌবাহিনী বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে। এ অভিযানে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কোস্টগার্ড।
বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হলে চীনের গুপ্তচরবৃত্তির সম্ভাব্য ক্ষমতা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র একটা স্বচ্ছ ধারণা পাবে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এ বেলুনের প্রভাব খুব একটা নেই বলে ধারণা করছেন।
উত্তর আমেরিকার আকাশসীমায় শনাক্ত হওয়া সন্দেহজনক চীনা ‘নজরদারি বেলুন’ ধ্বংস করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনায় মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে।
‘বেলুন-কাণ্ডে’ ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এ ঘটনার জেরে চীন সফর বাতিল করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গত শুক্রবার চীনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইকে তিনি বলেছেন, চীনা বেলুনের অনুপ্রবেশ একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
এ নিয়ে অবশ্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, মূলত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুনটি আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে সেটি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। দেশটির আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি উড়ে যাওয়ার এ ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।
এদিকে গতকাল রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বেলুন প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বেলুনটি গুলি করে ধ্বংস করতে দেরি করা চীনের প্রতি দুর্বলতা দেখানো এবং প্রাথমিকভাবে মার্কিন আকাশসীমা লঙ্ঘনকে অপ্রকাশিত রাখার চেষ্টা।
সিনেট আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সদস্য রিপাবলিকান টম কটন বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, চীনা কমিউনিস্টদের প্রতি উসকানিমূলক বা সংঘাতমূলক হবে এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রেসিডেন্টের অনিচ্ছা আছে।’
ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে বেলুনটি ধ্বংস করা প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এ অভিযানকে ‘ইচ্ছাকৃত কর্মকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি শনিবার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন করেছে চীন। আর এর জবাবেই অভিযানটি চালানো হয়েছে।
এদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক জন র্যাটক্লিফ বেলুন নিয়ে লয়েড অস্টিনের মূল্যায়নকে অস্বীকার করেছেন। অস্টিনের মূল্যায়ন ছিল একই ধরনের বেলুন আগের প্রেসিডেন্টের সময় যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে।
এ বক্তব্য অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘চীন “ট্রাম্প”-এর প্রতি খুব বেশি সম্মান করে তা করেছিল এবং আর এটা কখনোই করেনি।’
সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলুন ও চীনা নজরদারি সম্পর্কে সিনেটরদের বিস্তারিত জানাবে পেন্টাগন।