যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে কৃষ্ণাঙ্গদের মুঠোফোনে বর্ণবাদী খুদে বার্তা পাঠানো হয়

ছবি: পেক্সেলস

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে কৃষ্ণাঙ্গ নারী, পুরুষ, এমনকি শিশুদের মুঠোফোনে সমানে বর্ণবাদী খুদে বার্তা পাঠানো হয়। সেই বার্তায় ছিল, তাদের দাসত্ববরণের আহ্বানসহ নানা বিষয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) এবং আইন প্রয়োগকারী কয়েকটি বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে।

নিউইয়র্ক, আলাবামা, ক্যালিফোর্নিয়া, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, ম্যারিল্যান্ড, টেনেসিসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বেনামে এসব খুদে বার্তা পাঠানো হয়। এফবিআই জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তারা বিচার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আর ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (এফসিসি) জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পাশাপাশি তদন্ত করছে।

এফসিসির প্রধান জেসিকা রোজেনওরসেল বলেন, এসব খুদে বার্তা অগ্রহণযোগ্য। আইনি সংস্থাগুলো এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মকাণ্ডকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেন, বার্তাগুলোর ভাষা কিছুটা ভিন্ন ছিল। তবে সবাইকে সেই বার্তায় একটি ‘বাসে চড়ে বসতে’ বলা হয়, যেটি তাদের দাস হিসেবে কাজ করতে ‘খেতে’ নিয়ে যাবে। তাঁরা জানান, স্কুলগামী ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এসব খুদে বার্তা পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল গত বৃহস্পতিবার বলেন, যে বা যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁরা নিজেদের পরিচয় গোপন করতে ভিপিএন ব্যবহার করেছেন।

ম্যারিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যান্থনি ব্রাউন বলেন, তাঁর দপ্তরে এ ধরনের বর্ণবাদী খুদে বার্তার বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। শিশুসহ কৃষ্ণাঙ্গ লোকজনকে এসব বার্তা পাঠানো হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে কৃষ্ণাঙ্গদের লক্ষ্য করে দেশজুড়ে এই অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেন, এসব খুদে বার্তা ভয়ংকর, অগ্রহণযোগ্য এবং কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেক্সটনাউ বলেছে, এসব খুদে বার্তা পাঠাতে তাদের একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আর এসব নম্বরকে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে সঙ্গে সঙ্গে অকেজো করে দেওয়া হয়েছে।

কানাডাভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এসব খুদে বার্তার বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তারা দেখেছে, জড়িত ব্যক্তিরা বেশ কয়েকটি সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই অপকর্ম করেছেন। তারা তাদের অংশীদার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে মিলে বিষয়টি তদন্ত করছে।

সেবাদাতা বড় দুটি প্রতিষ্ঠান এটিঅ্যান্ডটি এবং ভেরিজন বলছে, এই শিল্পজুড়েই এ সমস্যা।

সিটিআইএর মুখপাত্র নিক লুদলুম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নম্বর থেকে এ ধরনের খুদে বার্তা এসেছে, এমন হাজার হাজার নম্বর ব্লক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারলেস শিল্প।

এমন একটি খুদে বার্তা এসেছে নর্থ ক্যারোলাইনার নিকোল নামের এক নারীর স্কুলগামী মেয়ের মুঠোফোনে। তিনি বলেন, সেখানে লেখা ছিল, ‘খেতখামারে কাজে ফিরে যেতে প্রস্তুত হও।’ ওই নারী বলেন, বর্ণবাদের কথা শুনে এলেও এই প্রথম নিজে এমন অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে তাঁর মেয়ে।

এই কৃষ্ণাঙ্গ মা বলেন, ‘এটা ঠিক আমার গালে চড় বসিয়ে দেওয়ার মতো। আর এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, বর্ণবাদের বিষয়ে এখনো মানুষের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।’

শার্লট শহরে নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার ও ইনফরমেশন সার্ভিসের সহকারী অধ্যাপক কোরি ফ্যাক্লারিস বলেন, ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কিছুটা ভিন্ন মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেখানে খুদে বার্তার বিষয়বস্তু নিরপেক্ষতার বিষয়ে কিছুটা যাচাই–বাছাই করা হয়েছে। তবে এমন কোনো চিরায়ত নিয়ম নেই যে দেখার আগেই এ বার্তাকে সন্দেহজনক বা অযাচিত বলা যাবে।