দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াসহ সুনিতা ও বুচের শরীরে কী কী প্রভাব পড়তে পারে

মহাকাশ থেকে ফেরার পর সুনিতা উইলিয়ামসছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

মহাকাশে সময় কাটানো ও পৃথিবী নামক গ্রহের অতুলনীয় দৃশ্য দেখাটা আমাদের অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো।

মানব শরীর সাধারণত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে কাজ করে অভ্যস্ত। সুতরাং মহাকাশে ভরহীন অবস্থায় সময় কাটানো শেষে পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীর শরীর পুরোপুরি সেরে উঠতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর ৯ মাস ধরে মহাকাশে থাকার পর গত মঙ্গলবার পৃথিবীতে ফিরেছেন। তাঁরা আসলে মহাকাশে ৮ দিনের অভিযানে গিয়েছিলেন। তবে মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাঁরা সেখানে ৯ মাস ধরে আটকে পড়েন। অবশেষে তাঁরা পৃথিবীতে ফিরেছেন। এখন তাঁদের সেরে ওঠার সময়।

সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবদেহ নিয়ে গবেষণা করেন অধ্যাপক ডামিয়ান বেইলি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মানুষকে যেসব পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার মধ্যে মহাকাশের পরিবেশ সবচেয়ে চরম। এই চরম অবস্থা সামলানোর ক্ষেত্রে মানুষ অভ্যস্ত নয়।

মহাকাশে প্রবেশ করলে মানুষের শরীরে পরিবর্তন আসে। প্রাথমিকভাবে সে অনুভূতিকে অসাধারণ মনে হয়।

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে গিয়েছিলেন নভোচারী টিম পিক। তিনি বলেন, ‘এটা ছুটির দিনের মতো। আপনার হৃৎপিণ্ডকে ঢিলেঢালাভাবে কাজ করলেই হবে। আপনার পেশি ও হাড়গুলোকে বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হয় না। অসাধারণ শূন্য-মাধ্যাকর্ষণের পরিবেশে মহাকাশকেন্দ্রের চারপাশে আপনি ভেসে বেড়াবেন।’

সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর আট দিনের অভিযানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন। পরে ৯ মাস তাঁরা সেখানে আটকে ছিলেন
এএফপি ফাইল ছবি

বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়

মহাকাশে মানুষের হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালিগুলোর তেমন একটা কাজ থাকে না। অলস অবস্থায় থাকতে থাকতে এগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে।

পুরোনো হাড় ভেঙে নতুন হাড় গঠনে ভূমিকা রাখা কোষগুলোর মধ্যে ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে গিয়ে এগুলোর ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে। হাড়গুলো দুর্বল ও বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায়।

অধ্যাপক বেইলি বলেন, ‘প্রতি মাসে তাঁদের হাড় ও পেশির প্রায় ১ শতাংশ শুকিয়ে যায়। এতে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়।’

পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্যাপসুল থেকে বের হয়ে এসে স্ট্রেচারে ওঠার মতো কাজ নভোচারীরা একা একা করতে পারেননি। তাঁদের অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে হয়েছে।

আর এসব কারণে নভোচারীদের অনেক ভালো রকমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে মহাকাশে যেতে হয়।

এখন সুনিতা ও বুচকে তাঁদের শরীরের হারিয়ে যাওয়া কার্যক্ষমতা ফিরে পেতে জোরেশোরে শরীরচর্চা করতে হবে।

মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্রিটিশ নভোচারী হেলেন শারমান বলেন, ‘তাঁদের পেশির ভর তৈরি করতে সম্ভবত কয়েক মাস সময় লাগবে।’

হাড়ের ভর ঠিক করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় নাও ফিরতে পারে।

শুধু পেশি আর হাড়ই নয়, মহাকাশে পুরো শরীরেই বদল আসতে পারে।

মানুষের শরীরে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়ার ধরন বদলে যায়। শরীরের তরল পদার্থগুলোর ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে। পৃথিবীর মতো পায়ের দিকে না নেমে মহাকাশে তরল পদার্থ বুক ও মুখের দিকে ওপরে উঠে যায়।

মহাকাশ থেকে ফেরার পর মানুষের শরীরে প্রথম যে পরিবর্তনটি চোখে পড়ে তা হলো, মুখ ফুলে যাওয়া।

মহাকাশে মস্তিষ্কে পরিবর্তন আসতে পারে। অপটিক নার্ভ, রেটিনাসহ চোখে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন আসতে পারে। এমনকি চোখের আকারও বদলে যেতে পারে।

মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে নিউরো–অকুলার সিন্ড্রোম নামক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এতে চোখে ঝাপসা দেখাসহ অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হতে পারে।

‘ঝিমুনি বোধ হওয়া’

মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার পর শরীর খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

টিম পিকস বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঝিমুনি ভাব, শরীরের ভারসাম্য আনা এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটার শক্তি ফিরে পেতে দুই-তিন দিন সময় লেগে যেতে পারে।

তাঁর মতে, মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার প্রথম দুই-তিনটা দিনকে অত্যন্ত সাজাপূর্ণ বলে মনে হয়।