হামাসকে যুদ্ধবিরতির চাপ, ইসরায়েলকে অস্ত্র বিক্রি

যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন চুক্তিতে সই করতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে হামাসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি হামলায় আহত এক নারীকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। শনিবার গাজায়ছবি : এএফপি

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে চাপ দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন চুক্তিতে সই করতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে হামাসের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ চুক্তিতে হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কারবি গত শুক্রবার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

কারবি বলেন, কাতারের দোহায় হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে। এ আলোচনা চালিয়ে যেতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দোহায় আরেকটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হচ্ছে। হোয়াইট হাউস ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে এসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসন একদিকে যেমন হামাসকে চাপ দিচ্ছে, অন্যদিকে আবার ইসরায়েলকে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টিও চূড়ান্ত করছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন প্রশাসন অনানুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসকে বিষয়টি জানিয়েছে।

* নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্তির চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। * গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি হয়নি। * ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দোহায় আরেকটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হচ্ছে। * বাইডেন ক্ষমতা ছাড়ার আগে ইসরায়েলের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে।

দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস এ খবর প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনা করেছে, তার মধ্যে যুদ্ধবিমান ও শত্রুকে আক্রমণ করতে ব্যবহৃত হেলিকপ্টারের সামরিক রসদ রয়েছে। এ ছাড়া গোলা ও যুদ্ধবিমানের জন্য আকাশেই নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র তালিকায় রয়েছে।

অস্ত্র বিক্রির এই প্যাকেজের মধ্যে ছোট ডায়ামিটার বোমা ও ওয়্যারহেড রয়েছে বলেও অ্যাক্সিওসের খবরে জানানো হয়। তবে ইসরায়েলের কাছে এসব অস্ত্র বিক্রি করতে হলে আগে বাইডেন প্রশাসনের এ প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের অনুমোদন পেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা অ্যাক্সিওসকে বলেন, প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) পরিষ্কার করে বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী ইসরায়েলের নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার এবং ইরান ও তাদের ছায়া সংগঠনগুলোর আগ্রাসন প্রতিহত করার অধিকার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলায়নি

বিক্ষোভকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি করে আসছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের কাছে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের যুদ্ধবিমান ও অন্য সামরিক অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয়। বাইডেন প্রশাসন বলে আসছে, ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন গাজার হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিদের কাছ থেকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার জন্য তারা সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখেও ইসরায়েলের গাজা হামলার সময় তাদের সমর্থন করে আসছে ওয়াশিংটন। ইতিমধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সেখানে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ৭১৭ পার হয়েছে। এ ছাড়া অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে ১৫ মাস ধরে চলা এ হামলা ঠেকানোর কূটনৈতিক নানা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী ওয়াশিংটন এর আগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির খসড়ায় ভেটো দিয়েছে।

২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এরপর ক্ষমতায় বসবেন গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন ও ট্রাম্প দুজনই কট্টর ইসরায়েলপন্থী। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে গাজা যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেবেন।