পান্নুন হত্যাচেষ্টা : অভিযুক্ত নিখিল গুপ্ত সম্পর্কে যা বলল এফবিআই
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টায় অভিযুক্ত নিখিল গুপ্তকে গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানের একটি আদালতে তোলা হয়েছে। সেখানে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়।
অভিযুক্ত নিখিল গুপ্ত নিজেও ভারতের নাগরিক। গত বছরের জুনে তিনি ভারত থেকে প্রাগে যান। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৪ জুন চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়।
আজ ম্যানহাটানের ম্যাজিস্ট্রেট জজ জেমস কট ২৮ জুন নিখিল গুপ্তের মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তখন পর্যন্ত তাঁকে আটক রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব প্রিজনসের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, নিখিল গুপ্তকে বর্তমানে ব্রুকলিনের মেট্রোপলিটন ডিটেনশন সেন্টারে আটক রাখা হয়েছে। তাঁকে গত শুক্রবার (১৪ জুন) চেক প্রজাতন্ত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়।
শুনানি শেষে নিখিল গুপ্তের আইনজীবী জেফরি চ্যাব্রো সাংবাদিকদের বলেন, তড়িঘড়ি করে কোনো সিদ্ধান্ত টানা ঠিক হবে না। এই মামলা দুই দেশের জন্যই একটি জটিল বিষয়। মামলার পটভূমি ও বিস্তারিত প্রকাশিত হলে তা (যুক্তরাষ্ট্র) সরকারের অভিযোগকে সম্পূর্ণ নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে।
দোষী সাব্যস্ত হলে ৫২ বছর বয়সী নিখিল গুপ্তের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
মার্কিন কর্মকর্তারা যা বললেন
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নিখিল গুপ্ত এখন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড। তিনি বলেছেন, ভারত সরকারের একজন কর্মকর্তা তাঁকে (পান্নুনকে হত্যার) নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ভারতের শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে সমর্থন করায় একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিলেন তাঁরা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মোনাকো অভিযোগ করেন, তিনি (নিখিল গুপ্ত) নিউইয়র্ক শহরে এক মার্কিন নাগরিককে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এটা একজন রাজনৈতিক কর্মীকে চুপ করিয়ে দেওয়ার নির্লজ্জ চেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত স্বাধীনতাকে যদি কোনো বিদেশি নাগরিক ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করে, তাহলে এফবিআই তা মেনে নেবে না। মার্কিন নাগরিক ও তাদের অধিকার রক্ষা করতে সংস্থাটি দেশে ও বিদেশে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
এদিকে নিখিল গুপ্তকে একজন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ডিইএ) প্রশাসক অ্যান মিলগ্রাম।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ
প্রাগে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ না করতে গত মাসে চেক প্রজাতন্ত্রের একটি স্থানীয় আদালতে আবেদন করেন নিখিল গুপ্ত; কিন্তু আদালত তাঁর আবেদন বাতিল করে দেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর বাধা দূর হয়।
গত শুক্রবার (১৪ জুন) চেক প্রজাতন্ত্র থেকে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়। ১৭ জুন এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্ট দেন চেক প্রজাতন্ত্রের বিচারমন্ত্রী পাভেল ব্লাজেক। সেখানে তিনি লেখেন, ‘ভারতের নাগরিক নিখিল গুপ্তকে শুক্রবার (১৪ জুন) যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। তাঁকে এক ব্যক্তিকে হত্যার জন্য ভাড়া করা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’
প্রত্যর্পণের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে গত রোববার পান্নুন রয়টার্সকে বলেন, ‘নিখিল গুপ্ত তো কেবল একজন পদাতিক সেনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি নির্দেশে ভারত সরকারের সেসব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাঁকে ভাড়া করেছিলেন, তাঁরা তো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৌঁসুলিদের অভিযোগ, গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যা করতে ভারতীয় কর্মকর্তারা নিখিল গুপ্তকে ভাড়া করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের নথিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের মে মাসে ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা নিখিল গুপ্তের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন। ভারতে বসেই তিনি পান্নুনকে হত্যা করতে নিখিল গুপ্তকে নির্দেশ দেন।
ভারতের অস্বীকার
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লির পাল্টা দাবি, পান্নুন হত্যাচেষ্টার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের অপতৎপরতা ভারত সরকারের নীতির বিরোধী। তবে তারা ওয়াশিংটনের অভিযোগ তদন্ত করে দেখবে।
গত মাসে ওয়াশিংটন জানায়, পান্নুন হত্যাচেষ্টার বিচার নিশ্চিত করতে ভারতের সহায়তা সন্তোষজনক। তবে এখনো অনেক কিছু বাকি আছে।
পান্নুন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডারও নাগরিক। তিনি ভারতে স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের জোরালো সমর্থক। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নানাভাবে জড়িত তিনি। ভারত সরকার তাঁকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডা সরকার অভিযোগ করে, তাদের দেশে ২০২৩ সালের জুনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে। তাদের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এই বিষয়ে অধিকতর তথ্য সংগ্রহ করছেন।
ভারত কানাডার এই অভিযোগ অস্বীকার করে। কিন্তু এ ইস্যুতে উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেয়। কূটনীতিক প্রত্যাহার করে। এরপর গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, তাঁদের মাটিতে পান্নুন হত্যাচেষ্টার সঙ্গে ভারতের সরাসরি হাত রয়েছে। নিখিল গুপ্ত এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত।