যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ মামলা: আপিলের সুযোগ পেলেন অ্যাসাঞ্জ
লন্ডন হাইকোর্ট গতকাল এ আদেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলার তদন্ত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পেলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। যুক্তরাজ্যের লন্ডন হাইকোর্ট গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের মুখোমুখি হলে ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না এবং সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করবেন—এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের বিষয়ে আদালত সন্তুষ্ট কি না, সে বিষয়ে আদেশ দেন লন্ডন হাইকোর্টের দুই বিচারক।
২০১০ ও ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ। এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করা অ্যাসাঞ্জকে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির বিচার বিভাগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলার তদন্ত করছে।
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে করা মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিচারক বলেন, অনেকগুলো দিক বিবেচনায় প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের আপিল করার
সুযোগ রয়েছে।
অ্যাসাঞ্জের ১৩ বছরের আইনি লড়াইয়ে গতকাল ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এদিন আদালতের সামনে হাজারো মানুষ বিক্ষোভ করেন। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া আশ্বাসে দুজন বিচারক সন্তুষ্ট কি না, তা জানতে চান। আদালতের পক্ষ থেকে অ্যাসাঞ্জের পক্ষে আপিল করার অনুমতির আদেশ এলে বিক্ষোভকারী নেচেগেয়ে উল্লাস করেন। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী দল বলে, এই মামলায় অ্যাসাঞ্জ হেরে গেলে তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটলান্টিক পাড়ি দিতে হতো।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী এডওয়ার্ড ফিজজেরাল্ড বলেন, তাঁরা বিচারকদের বলেছিলেন যাতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিশ্চয়তা তাঁরা বিবেচনা না করেন। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণকারী অ্যাসাঞ্জ সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর অধীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করবেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালত তা মানতে বাধ্য নন। তিনি বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের অপর্যাপ্ত নিশ্চয়তা।
ফিজজেরাল্ড আরও বলেন, তাঁরা আদালতে অ্যাসাঞ্জকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তাতে অস্পষ্টতা থাকার কথা তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি জেমস লুইস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনীর অধীনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়টি পর্যাপ্ত। তিনি বলেন, এতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে অ্যাসাঞ্জের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হবে না।
ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিপুলসংখ্যক গোপন নথি ২০১০ সালে ফাঁস করে দেয় উইকিলিকস। মার্কিন গোপন নথি ফাঁসের এ ঘটনায় ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এর পর থেকে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের চেষ্টায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯ সালে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ।