ট্রাম্প-বাইডেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের কে হাল ধরছেন
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরেন বা না ফেরেন, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনের প্রভাব একাধিক কারণে সুদূরপ্রসারী হতে পারে। বিশেষ করে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রজন্মের পরিবর্তন রাজনীতির গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে পারে।
চলতি বছর মার্কিন নির্বাচন ঘিরে বাকি বিশ্বের আগ্রহের মধ্যে একটা মরিয়া ভাব টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে সে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আমূল বদলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতার শেষে ট্রাম্প কিছুতেই নির্বাচনে নিজের হার স্বীকার করেননি। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হলে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর জোরালো আঘাত হানতে পারেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন। অন্যদিকে অশীতিপর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুনর্নির্বাচিত হলেও আর কত দিন তিনি কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন, সে বিষয়েও সংশয় রয়েছে।
রিপাবলিকান দলের মনোনয়নের দৌড়ে ট্রাম্পের পথ থেকে একের পর এক বাধা দূর হয়ে যাচ্ছে। একাধিক প্রার্থী দলের প্রাথমিক বাছাইয়ের প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যবসায়ী বিবেক রামস্বামী ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে রন ডিস্যান্টিস রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। রামস্বামী এমনকি ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন, এমন জল্পনাকল্পনাও চলছে।
ট্রাম্পেরই কিছুটা ‘দায়িত্বশীল’ সংস্করণ হিসেবে পরিচিত ডিস্যান্টিসও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী, জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি। তিনি নিজেকে রিপাবলিকান দলে ট্রাম্পের একমাত্র বিকল্প এবং ট্রাম্প ও বাইডেনের মতো ‘বৃদ্ধ’প্রার্থীদের বদলে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবারের নির্বাচনে বয়স সত্যি একটি ধর্তব্যের বিষয়। বাইডেনের বয়স ৮১, ট্রাম্পের ৭৭৷ ফলে তাঁদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সম্পূর্ণ কার্যকাল পূরণ করার ক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তেমন নেতৃত্বের পরিচয় দেখাতে পারেননি। নিজের দপ্তরে কেলেঙ্কারির ফলেও কিছুটা কোণঠাসা হয়ে গেছেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প দলের মনোনয়ন পেলে কাকে শেষ পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করবেন, তার ওপরও ভোটারদের সিদ্ধান্ত কিছুটা নির্ভর করতে পারে। বাইডেন শেষ মুহূর্তে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য আরও আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য কোনো ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলে হয়তো কিছুটা বাড়তি সমর্থন আদায় করতে পারবেন।
রাজনৈতিক আঙিনায় কমলা হ্যারিস, বিবেক রামস্বামী ও নিকি হ্যালির মতো তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে হিসাব–নিকাশ মার্কিন রাজনীতির বিবর্তন স্পষ্ট করে দিচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে যতটা শক্তিশালী করে তুলেছেন ও কর্মসংস্থানে জোয়ার এনেছেন, শুধু সেই তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারত। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ভোটারদের মনে তাঁর ভাবমূর্তি যথেষ্ট অনুকূল নয়। ফলে তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রশ্নের মুখে পড়ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মতো আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে বাইডেনকে এত ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে যে তিনি নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার মতো যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন না।
সাধারণত মার্কিন ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তালিকায় পররাষ্ট্রনীতির স্থান অনেক পেছনে।
ফলে বিদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাফল্য দেশে নির্বাচনের ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না। একমাত্র বিদেশে মার্কিন সৈন্য মোতায়েন বা প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েই বেশি মাথাব্যথা দেখা যায়।