আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি জো বাইডেন পরাজিত হন, তাহলে ইতিহাসের পাতায় একটি বিষয় স্পষ্ট ভাষায় লেখা থাকবে। সেটি হলো প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের ক্ষমতা তছনছ হতে সময় লেগেছিল মাত্র ১০ মিনিট।
বলা হচ্ছে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের নির্বাচনী বিতর্কের কথা। এই বিতর্কে মোটেও ভালো করেননি ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বাইডেন। আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে ওই বিতর্কে মুখোমুখি হন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে লড়াই করতে যাচ্ছেন এই দুজন।
১৯৬০ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন জন এফ কেনেডি ও রিচার্ড নিক্সন। এর পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিতর্কে সবচেয়ে দুর্বলতা দেখিয়েছেন বাইডেন। এই বিতর্কে তাঁর প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন রন ক্লাইন। তিনি বলেন, ‘বিতর্কে আপনি যেকোনো সময় হারতে পারেন। তবে প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনাকে জয় পেতে হবে।’ সে বিবেচনায় বাইডেন ভয়াবহ রকমের খারাপ করেছেন। বৃহস্পতিবারের বিতর্কে কী হতে যাচ্ছে, তা প্রথম আধা ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই বোঝা গিয়েছিল।
বিতর্কে বাইডেনের এমন বিপর্যয় ভোটাররা কীভাবে দেখবেন বা তিনি নিজেকে এই সংকট থেকে উদ্ধার করতে পারবেন কি না, তা বলার সময় এখনো আসেনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দেশের জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবেন না—এমন ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এটা সত্যি যে বৃহস্পতিবার রাতের পর তাঁর সক্ষমতা বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
বিতর্কে বাইডেনের বক্তব্যে অস্পষ্টতা ছিল। এর সুযোগ নিয়ে অপমান করে ট্রাম্প বলেন, ‘বাক্যের শেষে তিনি (বাইডেন) কী বলেছেন, তা সত্যিই আমি জানি না। আমার মনে হয় না, তিনি নিজেও জানেন।’
টেলিভিশনে বয়স্ক একজন প্রেসিডেন্টকে এমন হোঁচট খেতে দেখাটা লাখ লাখ দর্শকের জন্য কষ্টের। একটি পরীক্ষা ঘাড়ে নিয়ে বিতর্কে নেমেছিলেন বাইডেন। তা হলো, মার্কিনদের বোঝানো ৮১ বছর বয়সেও দায়িত্ব পালনে সক্ষম তিনি। তবে বিতর্কে ব্যর্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁর বয়স নিয়ে মানুষের আশঙ্কাই যেন সত্যি হলো।
বৃহস্পতিবার বাইডেনের এই ব্যর্থতা নিয়ে সিএনএনের রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক ভ্যান জোনস বলেছেন, ‘এটা কষ্টের। আমি জো বাইডেনকে পছন্দ করি। তিনি একজন ভালো মানুষ। দেশকে ভালোবাসেন। যতটা পারেন দেশের জন্য করছেন। আজ রাতে দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটি সুযোগ ছিল তাঁর। তবে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আমার মনে হয়, বাইডেন রাজনীতি ছেড়ে অন্য কিছু করুন—এমনটা অনেক মানুষই চাইবেন।’
বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের মতে, বিতর্কে তিনি (বাইডেন) শুরুটা ধীরগতিতে করেছিলেন। তবে বলিষ্ঠভাবে শেষ করেছেন। কমলা হ্যারিসের কথা সত্য। ৯০ মিনিটের বিতর্কে বাইডেনের ভালো সময়টা এসেছিল শেষের দিকে। ততক্ষণে বেশির ভাগ দর্শক যা ভাবার ভেবে নিয়েছেন। এখন যদি পর্দার আড়ালে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা বাইডেনের সক্ষমতা নিয়ে সোচ্চার হন, তাহলে তাঁকে ঘিরে সংকট আরও গভীর হবে। এমন পরিস্থিতির সহজ সমাধানও নেই। শুধু বাইডেন যদি প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে নিজেই সরে যান, তাহলেই এখানে নতুন কোনো মুখ দেখা যেতে পারে।
তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁকে সরানোর কোনো ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। এতে দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিতে পারে। আর সত্যিই এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে বসতে চাওয়া ট্রাম্পের জন্য বড় সুযোগ করে দেবে।
বাইডেনই কেবল প্রথম প্রেসিডেন্ট নন, যিনি নির্বাচনী বিতর্কে খারাপ করেছেন। এই তালিকায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রোনাল্ড রিগ্যানও রয়েছেন। তবে পরের ধাপের বিতর্কে তাঁরা ভালো করে দেখিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের দ্বিতীয় ধাপের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সেই বিতর্কে বাইডেন কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, তা এখনই ধারণা করা মুশকিল।