যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার তিন দিনে ২ লাখ ডলারের বাংলা বই বিক্রি করেছেন ৪১ জন প্রকাশক। স্থানীয় সময় সোমবার রাতে এই বইমেলা শেষ হয়। এবার মেলাটির ৩৩তম আয়োজন ছিল।
জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে চার দিনের এই বইমেলায় ৪১টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। এর আয়োজন করে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। গত শুক্রবার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নুরুল হুদা বইমেলা উদ্বোধন করেন। মেলায় বই বিক্রির সঙ্গে চলে কবিতা আবৃত্তি, সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বৈচিত্র্যময় সব আয়োজন।
বইমেলার সমাপ্তির পর নুরুল হুদা বলেন, ‘বাঙালি অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বই মেলা শেষ হলো। মেলা উদ্বোধনের পর প্রতিদিন এখানে এসেছি। যত দূর বাংলা ভাষা, তত দূর বাংলাদেশ—এ কথাটির সত্যতা আমরা দেখতে পাচ্ছি এই বইমেলায়। এ আয়োজন বিশ্ব বাঙালি এক মিলনস্থল হয়ে উঠেছে।’
নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল মুক্তধারা/জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার। এর আর্থিক মূল্যমান ৩ হাজার ডলার। এবার এই পুরস্কার পেয়েছেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা উদ্বোধন করতে ২০০৪ সালে একবার এসেছিলাম। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরে বইমেলা হয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, লস অ্যাঞ্জেলেস ও ডালাসে। সেই বইমেলা আমাকে পুরস্কার দিয়েছে। আমি অনেক সম্মানিত বোধ করছি। আনন্দ লাগছে খুব।’
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত সাহা বলেন, প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে আগত প্রকাশকদের বিনা মূল্যে বইমেলায় স্টল দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মধ্য থেকে একটি সংস্থাকে দেওয়া হয় চিত্তরঞ্জন সাহা সেরা প্রকাশক পুরস্কার। ১ হাজার ডলার মূল্যমানের এ পুরস্কার পেয়েছেন সময় প্রকাশনীর কর্ণধার ও সম্পাদক ফরিদ আহমেদ। প্রকাশকেরা অত্যন্ত খুশি।
৩৩তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার আহ্বায়ক হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘বাংলাদেশ, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কলকাতাসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সাহিত্যিক, প্রকাশক এবং দর্শনার্থীরা মেলায় এসেছেন। বিতর্ক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, একক সংগীত অনুষ্ঠান দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। আমার কাছে এবারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল নতুন প্রজন্মের ব্যাপক অংশগ্রহণ। আমরা আগামী মেলাগুলো তাঁদের হাতেই সমর্পণ করতে চাই। আগামী বছর একই স্থানে মে মাসের ২৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত চলবে আন্তর্জাতিক এই বাংলা বইমেলার ৩৪তম আসর।’
বইমেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরিফিন সিদ্দিক, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সদস্যসচিব অভিনেত্রী সারা জাকের, অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার লুৎফুর রহমানসহ গুণীজনেরা।