গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই

ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় ‘বিস্ময়, হতাশা ও শঙ্কা’ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। প্রায় সবাই বলেছেন, গণতন্ত্রে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আগামী ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের ওপর হামলার পরপরই এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এটা অসুস্থ মানসিকতা। সবার উচিত এ ঘটনার নিন্দা জানানো।’

ট্রাম্প হাসপাতাল ছাড়ার পরে তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেন টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার এলাকায় নির্বাচনী সমাবেশ চলাকালে ট্রাম্পের ওপর একাধিক গুলি চালানো হয়। সে সময়  ট্রাম্প সবে মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছিলেন। গুলি ট্রাম্পের ডান কানের ওপরের অংশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। রক্তাক্ত ট্রাম্পকে দ্রুত ঘিরে ধরে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেন সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা। গুলিতে দর্শক সারিতে থাকা একজন নিহত এবং আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

ট্রাম্পের ওপর হামলার পরদিন রোববার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সারা ব্যথিত। নেতানিয়াহু লিখেছেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা এবং দ্রুত আরোগ্যলাভের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি।’

যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি ‘আতঙ্কিত’ বোধ করছেন। এক্সে এক পোস্টে স্টারমার লিখেছেন, ‘আমরা তাঁর (ট্রাম্প) ও তাঁর পরিবারের প্রতি শুভকামনা জানাচ্ছি। আমাদের সমাজে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই।’

এক্সে এক পোস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘আমার বন্ধু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। রাজনীতি ও গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। নিহত ব্যক্তির পরিবার, যাঁরা আহত হয়েছেন এবং আমেরিকার জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা ও প্রার্থনা রইল।’

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং–তে এক্সে এক পোস্টে ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেছেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।’  

এক্সে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো লিখেছেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনায় আমি অসুস্থবোধ করছি। রাজনৈতিক সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে, এমন যেকোনো ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে আমাদের অবশ্যই কঠোরভাবে দাঁড়াতে হবে। আমি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

প্রায় একই কথা বলেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। যদিও আমরা সেখানে ঠিক কী ঘটেছিল, তা এখনো স্পষ্টভাবে জানতে পারিনি, তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুতর আহত হননি, সেটা আমাদের সবার জন্যই স্বস্তির। মিশেল ও আমি তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

রিপাবলিকান দলের সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন, ‘কাপুরুষোচিত হামলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন নিরাপদে আছেন তাতে আমি ও লরা কৃতজ্ঞ। সিক্রেট সার্ভিসের নারী ও পুরুষ সদস্যরা দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করছি।’

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন রয়েছে, সেটা রাশিয়া বিশ্বাস করে না। তবে এই প্রশাসনই এমন পরিবেশ তৈরি করেছে যেটা এই ঘটনা উসকে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দিতে সব আইনি কলাকৌশল ব্যবহার করা হয়েছে– আদালত, প্রসিকিউটর, রাজনৈতিকভাবে মর্যাদাহানি এত কিছুর পর বাইরের সবার কাছে এটা মনে হওয়া আবশ্যক যে, তাঁর জীবন সংকটে রয়েছে।’