নেটিভ আমেরিকান শিশুদের নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমা চাইবেন বাইডেন
বহু বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নেটিভ আমেরিকান শিশুদের তাদের পরিবার থেকে সরিয়ে বোর্ডিং স্কুলে রেখে যে নির্যাতন চালিয়েছিল, সে জন্য ক্ষমা চাইবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাইডেন এ কথা বলেছেন।
বোর্ডিং স্কুলগুলোতে নেটিভ আমেরিকান (যুক্তরাষ্ট্রের আদি বাসিন্দা) শিশুদের জোর করে আটকে রাখত মার্কিন সরকার। ১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ ব্যবস্থা চালু ছিল। সম্প্রতি মার্কিন সরকারের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই সব বোর্ডিং স্কুলে শিশুদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়ন চালানো হতো। এমনকি সেখানে ৯৫০ জনের বেশি শিশুর মৃত্যুও হয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকে বের হওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি এমন কিছু করতে যাচ্ছি, যা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। তা হলো, ইন্ডিয়ানদের সন্তানদের সঙ্গে এত বছর ধরে আমরা যে ধরনের আচরণ করেছি, তার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।’
আজ শুক্রবার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে গিলা রিভার ইন্ডিয়ান রিজারভেশন পরিদর্শনে যাবেন বাইডেন। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার কথা আছে তাঁর। যুক্তরাষ্ট্রে যে অঙ্গরাজ্যগুলোতে নেটিভ আমেরিকানদের বসবাস বেশি, তারই একটি অ্যারিজোনা। অঙ্গরাজ্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বলেও বিবেচিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত ওই বোর্ডিং স্কুলগুলো ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত চালু ছিল।
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপক্ষে ৯৭৩ জন শিশু এসব স্কুলে মারা গেছে। এসব স্কুলের অনেকগুলোই শিশুদের মূল বাড়ি থেকে দূরে ছিল।
মার্কিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভ হালান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কোনো নেটিভ আমেরিকান মন্ত্রী। বোর্ডিং স্কুলে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া এবং প্রতিবেদন তৈরির পেছনে তাঁর বড় ধরনের ভূমিকা ছিল।
হালান্ড বলেন, এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে লাখো আদিবাসী শিশুকে পরিবার এবং জনগোষ্ঠী থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং জোর করে বোর্ডিং স্কুলে রাখা হয়েছিল। এসব শিশুর কারও কারও বয়স চার বছরও ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে আমাদের ইতিহাস বই থেকে ভয়ংকর অধ্যায়টি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে এখন আমাদের প্রশাসন তাদের কাজকর্মের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করবে যেন ঘটনাটি কেউ ভুলে না যায়।’
কানাডায় একই ধরনের বোর্ডিং স্কুলে কয়েক হাজার শিশু মারা যাওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ক্ষমা চাওয়ার এ উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আদিবাসীদের ওপর ঐতিহাসিক নির্যাতনের অভিযোগগুলোকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, বেদনাদায়ক হলেও পুরো ইতিহাস জানাতে এবং তা স্মরণে রাখতে ক্ষমা চাওয়ার এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
হালান্ড বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আগামীকাল যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তা অত্যন্ত ঐতিহাসিক। এর গুরুত্বকে যথেষ্টভাবে ভাষায় প্রকাশ করতে পারলাম কি না, তা নিশ্চিত নই।
২০২০ সালের নির্বাচনে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বাইডেন।