কিশোরী কমলা হ্যারিস কেমন ছিলেন
মায়ের কাজের সুবাদে কানাডার মন্ট্রিলে কৈশোর কেটেছে কমলা হ্যারিসের। ওই সময় কানাডায় বসবাস করলেও তাঁর মন পড়ে থাকত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়, নিজের শহরে। তবু কানাডার সহপাঠীদের কাছে তিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল সেই মেয়ে, যিনি নাচতে ভালোবাসতেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কমলার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। ১৯৭৬ সালে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে তিনি কানাডার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মন্ট্রিলে চলে যান, তখন তাঁর বয়স ১২ বছর।
বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস ও মা শ্যামলা গোপালনের বিচ্ছেদ হয়ে যায় সে সময়। এরপর মা শ্যামলা মন্ট্রিলের জিউস জেনারেল হাসপাতালে চাকরি নেন এবং দুই মেয়ে কমলা ও মায়াকে নিয়ে সেখানে চলে যান।
২০১৯ সালে প্রকাশিত স্মৃতিকথায় কমলা ওই সময়ের স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে রৌদ্রোজ্জ্বল ক্যালিফোর্নিয়া থেকে, স্কুল বছরের মাঝখানে ১২ ফুট তুষারে ঢাকা ফরাসিভাষী বিদেশি শহরে চলে যাওয়ার চিন্তা তখন অন্তত দুঃখজনকই ছিল।’
প্রথম নারী, প্রথম আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকান, প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কমলা। কানাডায় কাটানো দিনগুলো নিয়ে কমলা খুব একটা কথা বলেননি। হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে তাঁর জীবনবৃত্তান্তে এমনকি তাঁর কানাডায় থাকার কোনো তথ্যও নেই।
কমলা ফরাসি ভাষা একদমই জানতেন না। তাঁর মা তাঁকে একটি ফরাসিভাষী স্কুলে ভর্তি হতে জোর করেছিলেন। কিন্তু কমলার জন্য ফরাসি ভাষা শেখা বেশ কঠিন হয়ে যায়। পরে তাঁকে দ্বিভাষিক (দুই ভাষা প্রচলিত) একটি স্কুলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ইংরেজি ভাষার ওয়েস্টমাউন্ট হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন কমলা। সেখান থেকেই ১৯৮১ সালে হাইস্কুল পাস করেন।
ওই স্কুলে কমলার সহপাঠী অনু চোপড়া শর্মা এএফপিকে বলেন, ‘কমলা খুবই বন্ধুসুলভ ছিলেন, খুবই বহির্মুখী, সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন, যিনি অন্যদের সাহায্য করতেন।’ মন্ট্রিলে ফরাসি ভাষা শেখা তাঁদের সবার জন্য কঠিন ছিল বলেও জানান অনু চোপড়া।
ওয়েস্টমাউন্ট হাইস্কুল মন্ট্রিলের অপেক্ষাকৃত ধনী এবং ইংরেজিভাষীদের এলাকায় অবস্থিত ছিল। বিদ্যালয়টি আশপাশের এলাকা থেকেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতো। যে কারণে সেখানে ‘চাকরিজীবীদের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া করত’ বলে জানান সাবেক শিক্ষক মারা রুডজাইটিস।
হ্যারিসের বয়স এখন ৫৯ বছর। তিনি খুবই সক্রিয় এবং বন্ধুবৎসল ছিলেন। তিনি ওই সময়ে বিভিন্ন ক্লাবের সদস্য ছিলেন এবং স্কুলের একটি ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তাঁর বন্ধু ডেন স্মিথ বলেন, ‘সে সব সময় হাসিমুখে থাকত, হাসত, যেমনটা এখন আপনি দেখতে পান। সে সবার সঙ্গেই বন্ধুসুলভ ছিল।’
শিক্ষক রুডজাইটিস কমলার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘মনে আছে, “খুবই বুদ্ধিদীপ্ত” এক কিশোরী, যার অনেক বন্ধু ছিল, শিখতে ভালোবাসত এবং স্কুলে টিফিনের বিরতির সময় “আর্ট রুমে” সময় কাটাত।’
কানাডায় বসবাসের সময়ই আইনজীবী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কমলা। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হন।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী প্রচারের সময় এক ভিডিওতে কমলা কেন আইনজীবী হতে চেয়েছেন, তা জানান। বলেন, ‘যখন আমি হাইস্কুলে ছিলাম, আমার প্রিয় বান্ধবীদের একজন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিল বলে আমি জানতে পেরেছিলাম। আমার আইনজীবী হওয়ার পেছনে এটা একটা বড় কারণ। আমি তার মতো মানুষদের সুরক্ষা দিতে চেয়েছিলাম।’
কমলার বন্ধু ওয়ানডা কাগান বেশ কয়েক মাস তাঁদের সঙ্গে থেকেছেন। ওয়ানডা কাগানকে তাঁর সৎবাবা নির্যাতন করতেন।
কমলা নিজেই বলেছেন, একসময় কানাডায় ভালো সময় কাটাতে শুরু করলেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাঁর ‘মন খারাপ হতো’। বলেন, ‘আমি সব সময় বাড়িতে ফিরে যেতে চাইতাম।’ কানাডা থেকে হাইস্কুল পাস করে কমলা ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান।