ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর প্রশাসন। ইসরায়েলি নৃশংসতায় অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়ায় বাইডেনের প্রতি ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিমরা। তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে মুসলিমদের এক হওয়ার ডাক দিচ্ছেন নেতারা।
আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচনে আবার লড়বেন বাইডেন। কিন্ত নির্বাচনের ফলনির্ধারণী (সুইং স্টেট) দেশটির অন্তত ছয় অঙ্গরাজ্যের মুসলিম নেতারা গতকাল শনিবার বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে বাইডেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে মুসলিমদের এককাট্টা করবেন তাঁরা। তবে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলিমরা কাকে সমর্থন দেবে, সেটি অবশ্য তাঁরা স্পষ্ট করেননি।
২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার নেপথ্যে যেসব অঙ্গরাজ্যের বড় ভূমিকা ছিল তার মধ্যে এই ছয় অঙ্গরাজ্যও আছে। এসব রাজ্যের ভোটারদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মুসলিম ও আরব–আমেরিকান। আসন্ন নির্বাচনে বাইডেনের জয়ে তারা বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় কাজ করে কাউন্সিল অন আমেরিকান–ইসলামিক রিলেশনস (সিএআইআর) নামে একটি সংগঠন। শনিবার মিশিগানের ডিয়ারবর্ন শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মিনেসোটা শাখার পরিচালক জায়লানি হুসেইনকে বাইডেনের বিকল্প নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জায়লানি হুসেইন বলেন, ‘আমাদের কাছে দুজন নয়, অনেক বিকল্প (প্রার্থী) আছে। তবে আমরা (মুসলিমরা) ট্রাম্পকেও (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) সমর্থন দিচ্ছি না।’
গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় প্রতিদিন শত মানুষের প্রাণহানির মুখে আমেরিকার মুসলিমরা এর প্রতিবাদে সোচ্চার হন। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন যাতে আহ্বান জানান, সেই দাবি তোলেন দেশটির মুসলিমরা। কিন্তু বাইডেন এতে সাড়া না দেওয়ায় ‘#অ্যাবানডন বাইডেন’ (বাইডেনকে ত্যাগ করো) নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু হয় মিনেসোটা থেকে। এরপর মিশিগান, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ে।
আমেরিকার মুসলিমরা বলছেন, জো বাইডেনকে প্রত্যাখ্যান করার কারণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনতে হলে এটাই তাদের একমাত্র উপায়।
গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের ওপর চাপ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা নিয়ে গতকাল শনিবার বাইডেনের সুরে কথা বলেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনিও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলেন।
আমেরিকার মুসলিমরা বলছেন, পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁদের জন্য ভালো কিছু করবেন, এমন আশা তাঁরা করেন না। আর বাইডেনকে প্রত্যাখ্যান করার কারণ হিসেবে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনতে হলে এটাই তাদের একমাত্র উপায়।
এখন এটাই দেখার বিষয় যে মুসলিম ভোটাররা দল বেঁধে বাইডেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন নাকি অল্প কিছু ভোটার তাঁকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে অল্পসংখ্যক মুসলিম ভোটার বাইডেনকে ভোট না দিলেও গত নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জয়ী এসব রাজ্যে বাইডেন চাপে পড়বেন।
সম্প্রতি করা এক জরিপে দেখা গেছে, আরব–আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন বাইডেন। ২০২০ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম তাঁকে সমর্থন করতেন। কিন্তু বিগত চার বছরের মধ্যেই এতে বড় ধস নেমেছে। এখন মাত্র ১৭ শতাংশ মুসলিম বাইডেনকে সমর্থন করেন।
আমরা এমন একজনের পাশে দাঁড়াব না, যিনি নীল নিশানাকে (ডেমোক্র্যাটদের দলীয় পতাকা) রক্তে রঞ্জিত করেছেন।হাজিম নাসারেদ্দিন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো
এতে মিশিগানের মতো রাজ্যগুলোয় জয়–পরাজয় নির্ধারণী হয়ে উঠতে পারেন মুসলিম ভোটাররা। কারণ, গত নির্বাচনে এ রাজ্যে বাইডেন মাত্র ২ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। আরব–আমেরিকান ইনস্টিটিউটের হিসাবে, মিশিগানের ভোটারদের মধ্যে ৫ শতাংশ মুসলিম।
এদিকে উইসকনসিনের মতো রাজ্যে মুসলিম ভোটার আছে প্রায় ২৫ হাজার। গত নির্বাচনে এই রাজ্যে বাইডেন জেতেন মাত্র ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এদিকে অ্যারিজোনায় মুসলিম ভোটার ২৫ হাজারের বেশি। গতবার রাজ্যটিতে মাত্র সাড়ে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পান বাইডেন।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগোর হাজিম নাসারেদ্দিন বলেন, ‘আমরা এমন একজনের পাশে দাঁড়াব না, যিনি নীল নিশানাকে (ডেমোক্র্যাটদের পতাকা) রক্তে রঞ্জিত করেছেন।’