টুইটার চালাতে মাস্ককে ‘সহায়তাকারী’ কে এই কৃষ্ণান

শ্রীরাম কৃষ্ণান
ছবি: টুইটার

টুইটারের নতুন মালিক ইলন মাস্ক গত সপ্তাহে কোম্পানিটির হাজারো কর্মীকে বরখাস্ত করে ঝড় তুলেছেন।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্কের বিতর্কিত এই পদক্ষেপ ক্ষোভ-হতাশার জন্ম দিয়েছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

টুইটার থেকে মাস্ক যাঁদের চাকরিচ্যুত করেছেন, তাঁদের মধ্যে কোম্পানিটির সিইওসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের স্থলে মাস্ক নিজের বন্ধু ও আস্থাভাজনদের নিয়ে একটি ছোট দল গড়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর এই দলে থাকা ব্যক্তিদের ওপরই তিনি তাঁর দর্শন বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।

ছোট দলটিতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সফটওয়্যার প্রকৌশলী শ্রীরাম কৃষ্ণান আছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি টুইটারের সাবেক নির্বাহী। গত বছর টুইটারের চাকরি ছাড়েন তিনি। ৩৭ বছর বয়সী কৃষ্ণান টুইটার ছাড়াও মাইক্রোসফট, ইয়াহু, স্ন্যাপ ও ফেসবুকে কাজ করেছেন।

আরও পড়ুন
ইলন মাস্ক
ছবি: এএফপি

কৃষ্ণান কে, মাস্কের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠল, এর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

আলোচনায় কৃষ্ণান

কৃষ্ণান বর্তমানে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম অ্যান্ড্রেসেন হোরোয়িটজে (এ ১৬ জেড) কাজ করছেন। কৃষ্ণান গত সপ্তাহে টুইট করে বলেন, তিনি সাময়িকভাবে মাস্ককে সাহায্য করছেন।

কৃষ্ণানের এ বক্তব্যের পর থেকেই তাঁর নাম ভারতে বেশ আলোচিত হচ্ছে। অবশ্য আগে পরাগ আগারওয়ালসহ ভারতীয় বংশোদ্ভূত অন্য নির্বাহীদের টুইটার থেকে মাস্ক বরখাস্ত করলে, তা নিয়ে ভারতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

কৃষ্ণান ঠিক কী পদে টুইটারে যোগ দেবেন, তা এখনই স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি। কিন্তু কৃষ্ণান বলেছেন, তিনি এখন টুইটার-সম্পর্কিত ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না।

মাস্কের সঙ্গে কৃষ্ণানের সম্পর্ক এখন কতটা ঘনিষ্ঠ, তা বলা কঠিন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বারবার তাঁকে মাস্কের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অংশ হিসেবেই বর্ণনা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সম্পর্কের শুরু

২০২১ সালের এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণান বলেছিলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী আরতি রামমূর্তির সঙ্গে মাস্কের প্রথম জানাশোনার সুযোগ হয়েছিল কয়েক বছর আগে। তখন টুইটার–সম্পর্কিত কিছু বিষয়ে মাস্ককে সাহায্য করেছিলেন কৃষ্ণান। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই তাঁদের সঙ্গে মাস্কের একটি সম্পর্ক তৈরি হয়।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের সদর দপ্তরে ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলেন কৃষ্ণান ও আরতি। এ সময় তাঁরা মাস্কের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন।

তিনজনের মধ্যে যোগাযোগের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন ‘ক্লাবহাউস’ নামের সোশ্যাল অডিও অ্যাপে এই দম্পতির উপস্থাপনায় এক টক শোতে উপস্থিত হয়েছিলেন মাস্ক। টক শোটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।

আরও পড়ুন
টুইটার সদর দপ্তর
ছবি: এএফপি

চেন্নাইয়ের দিনগুলো

কৃষ্ণানের জন্ম ভারতের চেন্নাইয়ে। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি খুবই সাধারণ মধ্যবিত্ত একটা পরিবারে জন্ম নেন, বেড়ে ওঠেন।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে কৃষ্ণানের পরিবারের কাছে কম্পিউটার ছিল একটি বিলাসিতা। তা সত্ত্বেও তিনি বলেকয়ে তাঁর বাবাকে একটি কম্পিউটার কেনার ব্যাপারে রাজি করান। এই কম্পিউটারই তাঁর জীবন বদলে দেয়।

২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণান বলেছিলেন, কম্পিউটারটি কিনতে তখন ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার রুপি খরচ হয়েছিল। কৃষ্ণান তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, তিনি তাঁর পড়াশোনার কাজে কম্পিউটারটি ব্যবহার করবেন।

কৃষ্ণান চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেছেন। একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একই বিষয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন আরতি। ২০০২ সালে তাঁদের পরিচয় হয়। পরে সম্পর্ক, বিয়ে। দুজনেরই স্বপ্ন ছিল সিলিকন ভ্যালিতে যাওয়ার।

একপর্যায়ে মাইক্রোসফটের ওপর কৃষ্ণানের একটি ব্লগপোস্ট কোম্পানিটির এক নির্বাহীর নজরে পড়ে। এই সূত্রে ২০০৫ সালে এই দম্পতি মাইক্রোসফটে নিয়োগ পান।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে জীবন

শ্রীরাম কৃষ্ণান ও আরতি রামমূর্তি
ছবি: টুইটার

২০০৭ সালে কৃষ্ণান যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। পরে যান আরতি। মাইক্রোসফটের পর তাঁরা অন্য বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তাঁরা ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান।
আরতি নিজের দুটি কোম্পানি শুরু করার আগে ফেসবুক ও নেটফ্লিক্সে কাজ করেন।

গত ডিসেম্বরে এই দম্পতি পডকাস্টার হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। করোনা মহামারিকালের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে তাঁরা এই কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তাঁরা ক্লাবহাউসে উপস্থাপনা শুরু করেন। বিশেষ করে প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথোপকথনের জন্য মহামারিকালে তাঁদের অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

আরও পড়ুন

টুইটার সংযোগ

মাস্কের সঙ্গে কৃষ্ণানের সম্পর্কের বিষয়ে খুব কমই জানা যায়। তবে কৃষ্ণান অতীতে মাস্কের একজন প্রকাশ্য ভক্ত ছিলেন। মাস্ককে একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তি ও একজন আইকনিক প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন কৃষ্ণান।

টুইটারের বিষয়ে মাস্কের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন কৃষ্ণান। বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইটটির নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

বর্তমানে এমন জল্পনা রয়েছে যে টুইটারকে নিজের মনমতো সাজিয়ে তুলতে কৃষ্ণানকে কাজে লাগাতে যাচ্ছেন মাস্ক।

কৃষ্ণান টুইটারের পরবর্তী সিইও হবেন কি না, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে এ-সংক্রান্ত আলোচনায় কৃষ্ণানের নাম থাকবে।