‘আমি কোথায় যাব’—দাবানল থেকে বাঁচতে হলিউডে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকা মানুষের আর্তি
হলিউডের প্রাণকেন্দ্রের অধিকাংশ এলাকা ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে। সড়কের পাশে সারবদ্ধ উঁচু উঁচু পামগাছের চূড়া কদাচিৎ দেখা যাচ্ছে।
আগুন থেকে সামান্য দূরের সড়কে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। নিশ্বাস নিতে জামা দিয়ে মানুষ তাঁদের মুখ ঢেকে রাখছেন। অনেকে ব্যাগ ও স্যুটকেস হাতে যাওয়ার জায়গা খুঁজছেন। কিছু মানুষকে রাস্তায় পায়জামা পরা দেখা গেছে।
হলিউডের বিখ্যাত সড়ক সানসেট বুলেভার্ডে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় দাবানল শুরু হয়। এতে করে হলিউডের অধিকাংশ এলাকা ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়, বাসিন্দাদের সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার স্থানীয় সময় মধ্যরাত নাগাদ একটি এলাকার প্রায় ৬০ একর পুড়ে গেছে।
বিবিসির সাংবাদিক সরেজমিন হলিউডের অবস্থা ঘুরে দেখেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, হলিউডে গাড়ি চালাতে চালাতে তিনি অনেক মানুষকে যা পারে, তা নিয়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন।
গাড়ি থেকে বের হয়ে (কয়েকটি স্থানে) বিবিসির সাংবাদিক মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। ভয় ও উদ্বেগ নিয়ে কিছু মানুষ তাঁর সঙ্গে কথা বলেন।
আনা ওয়াল্ডম্যান নামের এক নারী বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আপনি কি এখানে মানুষকে সাহায্য করতে এসেছেন? আমি কোথায় যাব? নিরাপদ জায়গা কোথায় আছে?’
বিবিসির খবরে বলা হয়, ‘মাথার ওপর দিয়ে সাইরেন বাজছে এবং হেলিকপ্টারের ডানা ভনভন শব্দ করছে।’
আনা বিবিসিকে বলেন, তিনি তাঁর কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। ভারী ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়ার পর তিনি পাশের একটি মুদিদোকানে থামার চিন্তা করেন।
এরপর আনা নিজের ঘরে ফিরে যান, জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। তিনি দেখেন, হলিউড হিলস হয়ে একই ব্লকের মধ্যে অবস্থিত তাঁর বাসার দিকে আগুন দ্রুত ধেয়ে আসছে।
এ পরিস্থিতিতে আনা কিছু খাবার, জামাকাপড়, চাদর এবং নিজের ছোট ছোট তিনটি কুকুরের জন্য খাবার নিয়ে গাঁটরিবোঁচকা বেঁধে বের হয়ে পড়েন।
বিধ্বস্ত এই নারী বলেন, ‘এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।’
মাকাইলা জ্যাকসন (২৬) তাঁর দুই বছর বয়সী সন্তান রামারিকে নিয়ে একটি সড়কের কোনায় অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা গৃহহীনদের একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মাকাইলা বিবিসিকে বলেন, ‘তাঁরা (উদ্ধারকর্মীরা) এসেই আমাদের বের হয়ে যেতে বললেন।’
এই নারী জানান, তিনি হলিউড হাইস্কুলের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখানে আরও বেশি সাহায্য-সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।
দাবানলের অদূরের অনেক সড়কে প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম তৈরি হয়েছে। এমন একটি সড়ক হলো হলিউড বুলেভার্ড, এই সড়কে হলিউড ওয়াক অব ফেম অবস্থিত। (হলিউড ওয়াক অব ফেম এলাকার মেঝে বা দেয়ালে ওয়াল্ট ডিজনি, মার্টিন স্করসেসি, মাইকেল জ্যাকসন, মুহাম্মদ আলিসহ বিখ্যাত অনেক হলিউড তারকার নাম লিখে রাখা হয়েছে)।
নিরাপদ স্থানে যেতে অনেকে ভুল পাশ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আশপাশের ফ্রিওয়ে (হাইওয়ে) থেকে রাতের অন্ধকারে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে।
তবে হলিউডের শহরতলির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, যেন কিছুই ঘটেনি। সেখানে মানুষ নৈশভোজ সারছেন, কেনাকাটা করছেন এবং সন্ধ্যায় কাজে বের হচ্ছেন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া দাবানলে এরই মধ্যে কয়েক হাজার একর জায়গা পুড়ে গেছে। অন্তত পাঁচজনের প্রাণহানি হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। ঝোড়ো বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত ছড়াচ্ছে। ইতিমধ্যে দাবানলকবলিত এলাকার এক লাখের বেশি মানুষকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।