চীনের সমালোচক ওয়াল্টজসহ আরও নতুন মুখ ট্রাম্প প্রশাসনে, কেমন তাঁরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্ক রুবিওছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর অধীনে গঠিত হতে যাওয়া প্রশাসনে দায়িত্ব পালনের জন্য আরও কয়েকজন নতুন সদস্যের নাম ঘোষণা করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনে কাকে কাকে নিয়োগ দিচ্ছেন, তা নিয়ে অনেক জল্পনা–কল্পনা চলছে। ট্রাম্প নিজেও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের রদবদল থাকবে।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের তথ্য বলছে, ফ্লোরিডার কট্টরপন্থী সিনেটর এবং চীনের সমালোচক মাইকেল ওয়াল্টজকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ট্রাম্পের প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত দলের সদস্য ওয়াল্টজ।

গত সপ্তাহে মার্কিন নির্বাচনের রাতে সিএনএনের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জবাবে তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ অবসানের একটি উপায় আছে। আমরা এটা অর্থনৈতিকভাবে করতে পারি, আমরা এটা কূটনৈতিকভাবে করতে পারি। ’

ওয়াল্টজ সুনির্দিষ্ট করে রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

সূত্রের বরাতে গতকাল সোমবার রয়টার্স জানতে পেরেছে, মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিওকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। রুবিও হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি লাতিনো বংশোদ্ভূত।

৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অভিবাসন কর্মকর্তা টম হোমানকে দেশের ‘সীমান্ত জার’ হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন। তিনি কট্টর অভিবাসীবিরোধী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। আর পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার (ইপিও) প্রধান হিসেবে ট্রাম্প তাঁর রাজনীতির শুরুর দিককার মিত্র লি জেলডিনের নাম প্রস্তাব করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সময় ধরে টমকে চিনি। আমাদের সীমান্তকে নিয়ন্ত্রণ করতে ও পাহারায় রাখতে তাঁর চেয়ে দক্ষ কেউ নেই।’

মাইকেল ওয়াল্টজ
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ট্রাম্প আরও বলেন, অবৈধ বহিরাগতদের সবাইকে তাঁদের নিজ দেশে বিতাড়িত করার দায়িত্ব পালন করবেন হোমান। আর নিউইয়র্কের কংগ্রেস সদস্য এলিসে স্টেফানিককে জাতিসংঘের দূত হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া এলিসে স্টেফানিক ইসরায়েলের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে থাকেন। তিনি এমন সময়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পাশাপাশি গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি বোমা হামলা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ হিমশিম খাচ্ছে।

স্টেফানিক ও জেলডিনের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তবে এ ব্যাপারে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের তদারকি এড়াতে সেখানে ছুটি চলাকালেই নিয়োগগুলো দিতে চাইছেন ট্রাম্প। শুধু তা–ই নয়, বিষয়টিকে রীতিমতো আনুগত্যের পরীক্ষায় পরিণত করেছেন তিনি। গত শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, সিনেটের নেতা হতে চাওয়া যেকোনো রিপাবলিকান সদস্যকে অবশ্যই ‘অবকাশকালীন নিয়োগ’-এর ব্যাপারে সম্মতি দিতে হবে।

ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই সিনেটের নেতা হতে ইচ্ছুক তিন সিনেটর আলাদা করে বলেছেন, তাঁরা এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন কিংবা এ ধারণাকে তাঁরা অন্ততপক্ষে সাদরে বিবেচনা করছেন।

ট্রাম্প আগামী জানুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প শুরুতে তাঁর মন্ত্রিপরিষদের জন্য কেবল একজনেরই নাম ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রচারবিষয়ক ব্যবস্থাপক সুজি ওয়াইলসকে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এ পদে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্কবিষয়ক সংস্থার (আইসিই) সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হোম্যান অভিবাসন বিষয়ে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চালানোটা ট্রাম্পের প্রচার অভিযানের একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি ছিল। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই নথিবহির্ভূত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিতাড়িত করতে বড় ধরনের অভিযান চালানোর অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

এদিকে ট্রাম্প বলেছেন পরিবেশের সুরক্ষাবিষয়ক সংস্থার (ইপিএ) প্রধান হিসেবে জেলডিনের কাজ হবে ‘ন্যায্য এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণহীন সিদ্ধান্ত’ গঠন করা। রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্প সুরক্ষা এবং দূষণসংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলো ভেঙে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণ, এগুলোকে ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধা বলে মনে করেন তিনি।