বিশ্বে প্রায় ৪০ কোটি শিশু বাড়িতেই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার: ইউনিসেফ
বিশ্বে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ কোটি শিশুকে বাড়িতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মারধর ও অপমানের মতো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গতকাল সোমবার বলেছে, এই সংখ্যাটি বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৬০ শতাংশ।
ইউনিসেফ ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১০০টি দেশের তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে, ওই শিশুদের ঘরে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ‘শারীরিক শাস্তি’ ও ‘মানসিক পীড়ন’ দুটোই করা হয়।
ইউনিসেফের কাছে মানসিক পীড়নের মধ্যে তাদের ‘বোকা’ বা ‘অলস’ বলার মতো শব্দ অন্তর্ভুক্ত। আর শারীরিক নির্যাতনের মধ্যে শিশুকে ঝাঁকুনি দেওয়া, আঘাত করা, থাপ্পড় দেওয়া বা আঘাত ছাড়াই শারীরিক ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে যেকোনো কাজ অন্তর্ভুক্ত।
ইউনিসেফ বলছে, এই প্রায় ৪০ কোটি শিশুর মধ্যে প্রায় ৩৩ কোটি শিশু শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশ শিশুদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করলেও বিশ্বের পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫০ কোটি শিশু এই ধরনের অনুশীলনের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে সুরক্ষিত নয়।
ইউনিসেফের তথ্যমতে, প্রতি চারজনের মধ্যে একাধিক মা বা দায়ী প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের সন্তানকে সঠিকভাবে শিক্ষিত করার জন্য শারীরিক শাস্তির প্রয়োজন আছে।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যখন শিশুরা বাড়িতে শারীরিক বা মৌখিক নির্যাতনের শিকার হয়, অথবা যখন তারা প্রিয়জনের কাছ থেকে সামাজিক ও মানসিক যত্ন থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তা তাদের আত্মমর্যাদা ও বিকাশের বোধকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।’
ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, যত্ন ও আনন্দদায়ক অভিভাবকত্ব শিশুদের নিরাপদ বোধ করতে, শিখতে, দক্ষতা তৈরি করতে এবং তাদের চারপাশ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করতে পারে।
আজ ১১ জুন মঙ্গলবার বিশ্বে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলাধুলা দিবস পালিত হচ্ছে। আর এ উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ইউনিসেফও শিশুদের খেলাধুলার সুবিধা সম্পর্কে এই ফলাফল প্রকাশ করেছে।
৮৫টি দেশের তথ্য অনুসারে, চার বছর বয়সী প্রতি দুজন শিশুর মধ্যে একজন বাড়িতে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে খেলতে পারে না এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের কাছে কোনো খেলনা নেই। দুই থেকে চার বছর বয়সী প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু বাড়িতে যথেষ্ট উদ্দীপনা বা অর্থপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া পায় না।
ইউনিসেফ বলছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের পড়া, গল্প বলা, গান গাওয়া ও ছবি আঁকার মতো বিষয়, সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ কাজের কোনো সুযোগ নেই।
ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, ‘প্রথম আন্তর্জাতিক খেলাধুলা দিবসে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করতে এবং ইতিবাচক লালন-পালন এবং আনন্দপূর্ণ যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।’