মাথার জায়গায় জায়গায় চুল পড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় এল বড়ি

দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত প্যারালিম্পিয়ান ও ব্লেড রানার বলে পরিচিত অস্কার পিস্টোরিয়াসও অ্যালোপেশিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেনফাইল ছবি: রয়টার্স

মাথার জায়গায় জায়গায় চুল উঠে পড়া বা অ্যালোপেশিয়া রোগের চিকিৎসায় প্রথমবারের মতো মুখে খাওয়ার বড়ি অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ১৩ জুন এই অনুমোদন দেওয়া হয়। দেশটিতে প্রতিবছর তিন লাখের বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। ওষুধটির নাম ব্যারিসিটিনিব।

অ্যালোপেশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সাময়িক বা স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যায়। এর প্রভাব শরীরে চুল আছে, এমন যেকোনো অংশে পড়তে পারে। এ থেকে মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে পারে।

সম্প্রতি হলিউড অভিনেত্রী জাডা পিংকেট স্মিথ, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য আয়না প্রেসলিসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এ সমস্যায় আক্রান্ত বলে বিষয়টি সামনে এসেছে। গত ২৮ মার্চ অস্কারের মঞ্চে মার্কিন কমেডিয়ান ক্রিস রককে চড় কষেছিলেন অস্কারজয়ী অভিনেতা উইল স্মিথ। ঘটনার সূত্রপাত ক্রিস রক মঞ্চে আসার পর। মঞ্চে দাঁড়িয়েই উইল স্মিথের স্ত্রীকে নিয়ে ঠাট্টা করেন ক্রিস। চুল পড়ার সমস্যার কারণে ন্যাড়া মাথায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন স্মিথের স্ত্রী জাডা পিংকেট স্মিথ। এ ঘটনার দুই মাস পর এক অনুষ্ঠানে জাডা বলেছিলেন, অ্যালোপেশিয়ার যন্ত্রণা না জেনেই যখন মানুষ তা নিয়ে মজা করেন, সেটা কতটা খারাপ লাগে, ভুক্তভোগী ব্যক্তিরাই জানেন।
এফডিএ কর্মকর্তা কেন্ডাল মার্কাস এক বিবৃতিতে বলেন, গুরুতর অ্যালোপেশিয়ায় আক্রান্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মার্কিন নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর চিকিত্সার সুযোগ থাকা দরকার। নতুন বড়ি এই রোগীদের চিকিৎসায় যে ঘাটতি ছিল, তা পূরণে সহায়তা করবে।

ব্যারিসিটিনিব নামের এ ওষুধ তৈরি করেছে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এলি লিলি। ওষুধটি ‘ওলুমিঅ্যান্ট’ নামেও পরিচিত। এটি গুরুতর অ্যালোপেশিয়ায় আক্রান্ত ১ হাজার ২০০ ব্যক্তির ওপর দুটি নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার পর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময় তিনটি গ্রুপে ভাগ করে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হয়। এক গ্রুপকে দেওয়া হয় প্লেসেবো (ওষুধের মতো দেখতে কিন্তু ওষুধ নয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়), এক গ্রুপকে দেওয়া হয় দৈনিক দুই মিলিগ্রামের ডোজ ও আরেক গ্রুপকে দেওয়া হয় দৈনিক ৪ মিলিগ্রামের ডোজ।

আরও পড়ুন

পরীক্ষার ৩৬ সপ্তাহ পর যাঁদের উচ্চমাত্রায় ডোজ দেওয়া হয়, তাঁদের প্রায় ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে মাথায় ৮০ শতাংশ চুল গজাতে দেখা যায়। কম ডোজের ক্ষেত্রে এ হার ২৩ শতাংশ আর প্লেসেবোর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ। যাঁদের ডোজের মাত্রা বেশি ছিল, তাঁদের ৪৫ শতাংশের ক্ষেত্রে ভ্রু ও চোখের পাপড়ি আবার বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।
এ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্বাসনালীর সংক্রমণ, মাথাব্যথা, ব্রণ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ক্রিয়েটিনিন ফসফোকিনেস নামক একটি এনজাইমের বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়।

বর্তমানে অ্যালোপেশিয়ার চিকিত্সায় সাময়িক বা মৌখিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে এগুলো পরীক্ষামূলক ওষুধ এবং কোনোটিই অনুমোদিত নয়।
ব্যারিসিটিনিব আগে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। করোনা মহামারির সময় হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুন