অসাধারণ ১০ পার্লামেন্ট ভবন সম্পর্কে যা জানা যায়

সব দেশেই গুরুত্বপূর্ণ ভবনের অন্যতম পার্লামেন্ট ভবন। একেক দেশের পার্লামেন্ট ভবন একেক রকম। কোনো কোনোটি শতাব্দীপ্রাচীন। সেসব ভবন বহু ইতিহাসের সাক্ষী। কোনো কোনোটি জগৎখ্যাত স্থপতিদের নকশায় তৈরি। কোনো কোনোটি খুবই আধুনিক নকশায় তৈরি। বিশ্বের চমৎকার সব পার্লামেন্ট ভবন নিয়ে প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সাজানো হয়েছে আজকের শীর্ষ ১০।

প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টার, যুক্তরাজ্য

দৃষ্টিনন্দন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন প্যালেস অব ওয়েস্টমিনস্টার একটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (১৯৮৭ সাল থেকে)। শতাব্দীপ্রাচীন এই ভবন বহু ইতিহাসের সাক্ষী। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটিতে ক্ষয় ধরেছে। ভবনের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন পানি চুঁইয়ে পড়ে। ফাটলও আছে। আগুন লাগলে তা নেভানোর মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। বড় কোনো বিপর্যয় ঘটলে ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে আশঙ্কায় ভবনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে। এ নিয়ে হয়েছে ভোটাভুটিও। যদিও সংস্কারে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে, সময়ও লাগবে অনেক। তাই অনেকে সংস্কারের বিপক্ষে মত দিয়েছেন।

পার্লামেন্ট হাউস, ক্যানবেরা

ক্যানবেরায় অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউস
ফাইল ছবি: রয়টার্স

১৯৮৮ সালে রানি প্রয়াত দ্বিতীয় এলিজাবেথ পার্লামেন্ট অব অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধন করেন। তার পর থেকে ওল্ড পার্লামেন্ট হাউসের পরিবর্তে নতুন পার্লামেন্ট ভবনে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট মেলবোর্ন থেকে রাজধানী ক্যানবেরায় সরিয়ে আনা হয়। তখন থেকে ওল্ড পার্লামেন্ট হাউসের কার্যক্রম চলছিল। ১৯৮৮ সালে বন্ধ হওয়ার পর এখন সেটিকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে। নতুন পার্লামেন্ট ভবনে ৪ হাজার ৭০০-এর বেশি কক্ষ রয়েছে। সেগুলোর বেশ কয়েকটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বড়দিন ছাড়া বছরের বাকি সব দিন সেখানে ঘুরতে যাওয়া যায়।

প্যালেস অব পার্লামেন্ট, বুখারেস্ট

বড়দিনের সময় রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে প্যালেস অব পার্লামেন্টের সামনে বসে ক্রিসমাস মার্কেট। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রোমানিয়ার প্যালেস অব পার্লামেন্ট নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। ১৯৯৭ সালে এ ভবনের উদ্বোধন করা হয়। এটি আকারে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রশাসনিক ভবন। এটির উচ্চতা ৮৪ মিটার এবং আয়তন ৩ লাখ ৬৫ হাজার বর্গমিটার। এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ভবনও বলা হয়। ধারণা করা হয়, এটির ওজন ৪০৯ কোটি ৮৫ লাখ কেজি। ১৯৯০ সালে ধনকুবের রুপার্ট মরডক ১০০ কোটি ডলারে ভবনটি কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

পার্লামেন্ট অব বুদাপেস্ট, বুদাপেস্ট

দানিয়ুব নদীর পানি বেড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট অব বুদাপেস্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি
ফাইল ছবি: এএফপি

দানিয়ুব নদীর তীরে হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট ভবন দ্য ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব হাঙ্গেরি। ভবনটি গথিক স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি। একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেখান থেকে এই ভবনের নকশা বেছে নেওয়া হয়। ১৯০৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়।

দানিয়ুব নদীর পানি বেড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। হাঙ্গেরির পার্লামেন্ট অব বুদাপেস্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। ফাইল ছবি: এএফপি

বিনেনহফ, হেগ

নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট ভবন বিনেনহফ
ফাইল ছবি: এএফপি

নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট বিনেনহফ, অবস্থান হেগ নগরীতে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো পার্লামেন্ট ভবন, যেটি এখনো ব্যবহার হচ্ছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রথম এই ভবন নির্মাণ করা হয়। নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ দ্য স্টেটস জেনারেল অব দ্য নেদারল্যান্ডস এবং মিনিস্ট্রি অব জেনারেল অ্যাফেয়ার্স উভয়ের কার্যক্রমই বিনেনহফ থেকে পরিচালিত হয়।

পার্লামেন্ট বিল্ডিংস, স্টরমন্ট

উত্তর আয়ারল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার জর্জ বেস্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান উত্তর আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট স্টরমন্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল
ফাইল ছবি: এএফপি

উত্তর আয়ারল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভবনের নাম স্টরমন্ট। ভবনটি রাজধানী বেলফাস্টের স্টরমন্ট এস্টেটে অবস্থিত। যে কেউ চাইলে ভবনটি ঘুরে দেখতে পারেন। ভবনটির নকশা করেছেন স্যার আর্নল্ড টরনেলি। এই কাজের জন্য রাজা জর্জ পঞ্চম তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। ছয়তলা এই ভবন ছয়টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি স্তম্ভ উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক একটি কাউন্টির প্রতীক। উত্তর আয়ারল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার জর্জ বেস্টের মৃত্যুর পর তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান স্টরমন্ট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। কারণ, বেলফাস্টে এত মানুষকে একসঙ্গে জায়গা দেওয়ার মতো বড় স্থান আর নেই।

দ্য প্যালেস অব দ্য ন্যাশনাল কংগ্রেস, ব্রাসিলিয়া

ব্রাজিলের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে চলছে বিক্ষোভ
ফাইল ছবি: এএফপি

ব্রাজিলের ন্যাশনাল কংগ্রেস ভবনের আকার খানিকটা অন্য রকম। দুই পাশে দুটি অর্ধ গোলক। সে দুই অর্ধ গোলকের মাঝখানে দুটি টাওয়ার। বাঁ দিকের অর্ধ গোলকে সিনেট এবং ডান দিকের অর্ধ গোলকে চেম্বার অব ডেপুটিস কার্যালয়। মাঝের দুই টাওয়ারে বসে ন্যাশনাল কংগ্রেস। ভবনের নকশাকার অস্কার নেইমায়ার। রিও ডি জেনিরো থেকে ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় স্থানান্তরের পর ১৯৬০ সালে এই ভবনের উদ্বোধন হয়।

পার্লামেন্ট হাউস, হেলসিঙ্কি

বিক্ষোভের অংশ হিসেবে বিক্ষোভকারীরা ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট হাউসের একটি অংশ লাল রঙ করে দিয়েছেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বিজয়ী স্থপতির নকশায় তৈরি হয় ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট হাউস। ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৩১ সালে। পাঁচতলা এই ভবনের সিঁড়ি মারবেল পাথরে তৈরি। আছে একটি লিফটও। গ্রীষ্মে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা পার্লামেন্ট হাউস ঘুরে দেখার সুযোগ পান।

ক্যাপিটল বিল্ডিং, ওয়াশিংটন ডিসি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন তৈরি হয় ১৮০০ সালে। পরে বিভিন্ন সময়ে এর পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়েছে। এই ভবনের নকশা করেছেন উইলিয়াম থর্নটন। প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়াম ও দ্য প্যারিস প্যান্থিয়নের নকশায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ক্যাপিটল ভবনের নকশা করেন। ১৮১২ সালের যুদ্ধে ভবনের একটি অংশ পুড়ে গিয়েছিল। ১৮২৬ সালে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ হয়। ১৮৫০ সালে ক্যাপিটল ভবনের আয়তন বাড়ানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনীয় স্থানের একটি এই ক্যাপিটল ভবন।

১০

রাইখস্টাগ, বার্লিন

বার্লিনের রাইখস্টাগ ভবনে বসে জার্মানির পার্লামেন্ট অধিবেশন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জার্মানির পার্লামেন্ট ভবন রাইখস্টাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৯৪ সালে। ১৯৩৩ সালে ভবনটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর্যন্ত ভবনটি সেভাবেই পড়ে ছিল। কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। দুই জার্মানি একত্র হওয়ার পর গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে রাইখস্টাগের পূর্ণ সংস্কার করা হয়। ১৯৯৯ সালে সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার পর জার্মান পার্লামেন্ট বুন্দেস্টাগ ফিরে আসে রাইখস্টাগে। রাইখস্টাগে বেড়াতে যেতে হলে আগে থেকে নাম নিবন্ধন করতে হবে।

তথ্যসূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ