করোনা মহামারির দ্রুত অবনতি হচ্ছে যে সাত দেশে

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে বিশ্বে এরই মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই মহামারির প্রকোপ এত দিন যে দেশগুলোতে খুব বেশি ছিল, সেখানে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ ও মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে অপর কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ আবার বেশ জনবহুল।

এখন যে সাতটি দেশে মৃত্যু ও সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে তার শীর্ষে আছে ব্রাজিল। ওই অঞ্চলেরই মেক্সিকো, ইকুয়েডর ও পেরুতেও একই অবস্থা। এ ছাড়া কানাডা, রাশিয়া ও ভারতে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গতকাল রোববার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ৪০ হাজারের মতো। মৃত্যু আড়াই লাখ ছুঁই–ছুঁই। সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায় সাড়ে ১১ লাখ।

চীনের পর মহামারি বেশি ভয়ানক আকার ধারণ করেছিল ইউরোপের দেশ ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, বেলজিয়াম ও নেদার‌ল্যান্ডস; উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার ইরানে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এখন প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার এবং যুক্তরাজ্যে পাঁচ থেকে সাত শ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অন্য সব দেশে মৃত্যু তুলনামূলক বেশ কমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও একটু ধীরে হলেও কমতির ধারায় আছে।

কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দেশটিতে এক লাখ ছুঁই–ছুঁই। প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছে পাঁচ–ছয় হাজার করে। গত পাঁচ দিনে দুই দিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচ শ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৫২০ এবং রোববার ৫০৯ জনের মৃত্যু হয়। অন্য তিন দিনের মধ্যে শুক্রবার মারা যায় ৪৪৮, শনিবার ৩৯০ এবং সোমবার ৩৪০ জন। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় বিশ্বে দেশটি এখন ৮ নম্বরে। গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ৬ হাজার ৭০০–এরও বেশি মানুষ।

এই পরিস্থিতি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো এই দেশেও চলছে লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। সে বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছেন স্বয়ং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো।

লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ পেরুতেও সংক্রমণ বাড়ছে। গত সাত–আট দিনে দৈনিক রোগী শনাক্ত হচ্ছে গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজারের বেশি। আর গত পাঁচ দিনে মৃত্যু হচ্ছে ৭০ জনের বেশি করে। এর মধ্যে গত শনিবার মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। সব মিলিয়ে দেশটিতে প্রায় ৪৩ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যু ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে।

পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে এই অঞ্চলের আরেক দেশ ইকুয়েডরে। মৃত্যু দেড় হাজার ছুঁই–ছুঁই। আক্রান্ত ৩০ হাজারের মতো। সেই অর্থে অন্য দেশগুলোর তুলনায় খুব বেশি মনে না হলেও গত পাঁচ দিনেই মারা গেছেন নয় শর বেশি মানুষ।

পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডায়ও। দেশটিতে গত এক মাসের প্রথম ১৫ দিন দৈনিক এক হাজারের বেশ এবং শেষ ১৫ দিন দৈনিক দেড় হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর মৃত্যুও গত ২০ দিনে কোনো দিন এক শর নিচে নামেনি। বেশির ভাগ দিন ছিল দেড় শর পাশাপাশি, একদিন তা দুই শও ছাড়িয়েছে। গত শনিবারও মারা গেছেন ১৭৫ জন। তার আগের দিন ২০৭ জন। সব মিলিয়ে কানাডায় মৃত্যু সাড়ে তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৫৭ হাজার।

মেক্সিকোয় মৃত্যু ২ হাজার ছাড়িয়েছে গতকাল। এর মধ্যে ১০ দিন ধরে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন এক শর বেশি মানুষ। দেশটিতে সংক্রমিত রোগী আছেন ২১ হাজারের বেশি। এক দিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন শনিবার, ১ হাজার ৫১৫ জন।

আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির পর সবচেয়ে বেশি রোগী এখন রাশিয়ায়। কিন্তু ওই দেশগুলোতে যখন মহামারির ভয়ানক প্রকোপ তখনো রাশিয়ার অবস্থা বেশ ভালো ছিল। তবে ১৫ দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে দেশটিতে। দেশটিতে গতকাল ১০ হাজার ৬৩৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে রাশিয়ায় রোগী শনাক্ত হলেন ১ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি। কিন্তু এত বেশি রোগী নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম মৃত্যু এই দেশটিতে, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন। শনিবার মারা গেছেন ৫৮ জন।

এরপরও রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ ১২ মে থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা ভাবছে। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন রয়ে গেছে।’

সংক্রমণ ও মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে প্রতিবেশী ভারতেও। এনডিটিভি জানায়, দেশটিতে শনিবার দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১০০ জন হয়। গতকালও বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। মোটের ওপর দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি রোগীর। শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছুঁই–ছুঁই।