ভেনেজুয়েলায় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ অব্যাহত

নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো জয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়ার পর ভেনেজুয়েলার রাজধানীতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে গতকাল মঙ্গলবারও রাজধানী কারাকাসে বিক্ষোভ হয়েছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর বিরোধিতা করে এদিন কয়েক হাজার মানুষ শহরটির প্রাণকেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন।

বিক্ষোভকারীদের অনেকে বলছেন, ভেনেজুয়েলায় নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত তাঁরা থামবেন না। আবার কেউ কেউ বলছেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো যদি বিরোধীদলীয় বিক্ষোভকারীদের কাতারে শামিল হয়, তাহলেই কেবল সরকারের পতন হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে মাদুরোর প্রতি অনুগত থাকতে দেখা গেছে। তারা কোনো কোনো বিক্ষোভকারীর ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে।  

গত রোববার ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো জয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির রাজধানীতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় দুটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বলেছে, বিক্ষোভ চলাকালে দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ভ্লাদিমির পাদ্রিনো এ বিক্ষোভকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। পাদ্রিনো এদিন একটি বিবৃতি পড়ে শোনান। এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর প্রতি সেনাবাহিনীর ‘পুরোপুরি আনুগত্য এবং অকুণ্ঠ সমর্থন’ আছে।

ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক সাব বলেছেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে এক সেনা নিহত হয়েছেন। দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত।

বিরোধী দলের নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মাচাদো বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে এগোতে হবে। সরকারের উসকানির ফাঁদে আমাদের পা ফেলা যাবে না। তারা চায়, ভেনেজুয়েলার মানুষেরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ুক।’          

মাচাদো আরও বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী আসলে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আমরা দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। ভেনেজুয়েলার যে মানুষগুলো একসময় মাদুরোর প্রতি আস্থা রাখতেন, তাঁরা এখন আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।’

সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনী জালিয়াতির প্রমাণ দেখেছেন।

ওই বিক্ষোভকারী বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। আমি একটি নির্বাচনী বুথে কাজ করেছি। সরকার তা স্বীকার করছে না। তারা রাতে অর্ধেক ভোট গণনার পর ভোটের সব হিসাবনিকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চায় না যে বিশ্ব জানুক তারা হেরেছে।’ ওই বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর দমনপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তাঁর নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

বিক্ষোভকারীরা বলছে, ভেনেজুয়েলার যেসব মানুষ আগের নেতা হুগো চাভেজের সমর্থক ছিল, তাঁরা এখন মাদুরো থেকে তাঁদের সমর্থন প্রত্যাহার করছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলা মাদুরো তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন বলে ভেনেজুয়েলার জাতীয় নির্বাচনী পরিষদের (সিএনই) প্রধান ঘোষণা দেওয়ার পরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সিএনই–প্রধান মাদুরোর দলেরই সদস্য। তিনি মাদুরোর আইনি উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।

এর আগে সিএনই ঘোষণা দেয়, মাদুরো ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে বিরোধীদলীয় প্রার্থী এডমান্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন। গঞ্জালেজ পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।

তবে এখন পর্যন্ত ভোট গণনার তথ্য বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। বিরোধীরা বলছে, সিএনই ঘোষিত ফল যে ভাঁওতাবাজি, তা এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে।  

গঞ্জালেজকে সমর্থনকারী বিরোধীদলীয় জোট বলেছে, তারা ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পর্যালোচনা করতে সক্ষম হয়েছে। গঞ্জালেজ যে ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন, তা তারা নিশ্চিত।

তবে সোমবার সিএনই ঘোষণা করে, সব ভোট গণনা হয়েছে এবং মাদুরো জয়ী হয়েছেন।