কারাকাসে আর্জেন্টিনা দূতাবাস ঘিরে রেখেছে ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা বাহিনী
ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাস ঘিরে রেখেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এই দূতাবাসে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোবিরোধী ছয় রাজনৈতিক নেতা আশ্রয় নিয়েছেন।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের সদস্যরা কিছু ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন। এতে দেখা যায়, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দূতাবাস কমপ্লেক্সের চারপাশে একটি ঘের তৈরি করেছেন।
ভবনের অভ্যন্তরে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, মাদুরো সরকার তাঁদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
ভেনেজুয়েলায় গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র ভেনেজুয়েলা ও আর্জেন্টিনার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে যায়। এর পর থেকে ভেনেজুয়েলায় আর্জেন্টিনা দূতাবাসের পাশাপাশি দেশটির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে ব্রাজিল।
গতকাল শনিবার ভেনেজুয়েলা সরকার দেশটিতে অবস্থিত আর্জেন্টিনা দূতাবাসের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ব্রাজিলকে দেওয়া কর্তৃত্ব প্রত্যাহার করেছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তোলা দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা রয়েছে। এই নির্বাচনে মাদুরোকে জয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়ে তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন।
অন্যান্য দেশ ভেনেজুয়েলা সরকারকে ভোটের ফলাফলের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। তবে রাশিয়া, চীনসহ মাদুরোর মিত্ররা তাঁর জয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার বিরোধীদের প্রকাশিত ভোটের পরিসংখ্যান বলছ, তাদের প্রার্থী এডমান্ডো গঞ্জালেজ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তবে পশ্চিমা দেশগুলো তাঁকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি।
ভেনেজুয়েলা সরকারের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ এসেছে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বক্তব্যের পর।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে মাদুরোসহ দেশটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করতে বলবে।
গত মার্চ মাস থেকে এই দূতাবাসে আছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কারিনা মাচাদোর উপদেষ্টা পেদ্রো উরুচুর্তু নোসেলি। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, গতকাল সকাল পর্যন্ত দূতাবাসের বাইরে হুডধারী কর্মকর্তাদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি দেখা গেছে। তারা সড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা এখনো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।
বিরোধী দলের আরেক কর্মকর্তা ওমর গঞ্জালেজ মোরেনো বলেছেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে দূতাবাস বিদ্যুৎহীন।
মাদুরো সরকারের নিরাপত্তা এজেন্টরা কারাকাসের আর্জেন্টিনার কূটনৈতিক সদর দপ্তর অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি হামলার হুমকি অব্যাহত রেখেছেন।
ভেনেজুয়েলা সরকার বলেছে, মাদুরো ও তাঁর ডেপুটির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ হত্যাচেষ্টার পরিকল্পনার জন্য এই ভবন ব্যবহারের প্রমাণ উন্মোচিত হওয়ার পর তারা এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
পরে ব্রাজিলের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ভেনেজুয়েলায় আর্জেন্টিনার স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব অব্যাহত রাখবে, যতক্ষণ না এই ভূমিকা পালনের জন্য অন্য সরকারকে নির্বাচিত করা হয়।
আর্জেন্টিনার কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা লঙ্ঘন না করার বিধানের ওপর জোর দিয়েছে ব্রাজিল।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে বলেছে, মিশনে অবস্থানরত আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বা অপহরণের যেকোনো প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কঠোর নিন্দা কুড়াবে। এই ধরনের পদক্ষেপ এই ধারণাকে আরও জোরালো করে যে মাদুরোর ভেনেজুয়েলায় মৌলিক মানবাধিকারকে শ্রদ্ধা করা হয় না।
ভেনেজুয়েলার সমালোচনা করেছে চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এই পদক্ষেপকে যুক্তিহীন কাজ বলে বর্ণনা করেছে। একই সঙ্গে বলেছে, ভেনেজুয়েলার এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের প্রতি গুরুতর অবহেলার প্রদর্শন।
ভেনেজুয়েলার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে।