আর্জেন্টিনায় ‘কঠিন’ ট্যাঙ্গো নাচ শিখতে পর্যটকদের ভরসা যখন ট্যাক্সি ড্যান্সার

এক নারীকে ট্যাঙ্গো নাচে সঙ্গ দিচ্ছেন ট্যাক্সি ড্যান্সারছবি: এএফপির ফাইল ছবি

আর্জেন্টিনায় ঘুরতে গেলে পর্যটকদের অনেকে ট্যাঙ্গো নাচে অংশ নেওয়ার শখ করে থাকেন। দেশটির ঐতিহ্যবাহী এ নাচের সমস্যা হলো, এটির মুদ্রা আয়ত্ত করা কঠিন। অনভিজ্ঞদের জন্য এ ধরনের নাচে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা ভয়ংকর হতে পারে।

কাঠের তৈরি মেঝেতে উঁচু জুতো পায়ে দিয়ে জুটি বেঁধে ট্যাঙ্গো নাচ পরিবেশন করা হয়। ট্যাঙ্গো নাচের ক্ষেত্রে যাঁরা একেবারে নতুন, তাঁদের শেখানো ও সঙ্গ দেওয়ার জন্য আছে একদল পেশাদার নৃত্যশিল্পী। এঁদের বলা হয় ‘ট্যাক্সি ড্যান্সার’।

ডেভিড টোলোসা (৩৫) নামের একজন ট্যাক্সি ড্যান্সার এএফপিকে বলেন, ‘ভেতরের (আর্জেন্টিনার) কারও সহায়তা ছাড়া এ নাচের অভিজ্ঞতা নিতে গেলে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির মুখে পড়ার আশঙ্কা থাকে।’

টোলোসা বলেন, ‘নাচের মেঝে একটি প্রদর্শনীর মতোই। পুরো সময় আপনার ওপর মানুষের নজর থাকবে। সেখানে অনেক নৃত্যশিল্পী এমনকি প্রসিদ্ধ নৃত্যশিল্পীরা থাকেন। তাঁরা সেখানে বসে নাচ উপভোগ করেন। আপনার মনে হবে যে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আপনি সেই চাপ টের পাবেন।’

অন্য দেশ থেকে আসা একেবারে নতুনদের সঙ্গে অভিজ্ঞ নৃত্যশিল্পীরা কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ ও বাজে ব্যবহার করে বসতে পারেন বলেও সাবধান করেন টোলোসা। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ না থাকলে অনেকে নাচের মঞ্চ থেকে বাদ পড়তে পারেন। আবার পায়ে ব্যথা পাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

আর্জেন্টিনায় যেসব নারী একা ঘুরতে যান, তাঁদের জন্য ট্যাঙ্গো নাচে অংশ নেওয়ার ইচ্ছাটা হতাশাজনক অভিজ্ঞতায় রূপ নিতে পারে। ট্যাঙ্গো নাচের আসরে সাধারণত পুরুষেরা নাচের জন্য নারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। পরিচিত মানুষ কিংবা সঙ্গী ছাড়া এ ধরনের ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা কম, পেলেও অনেক লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করতে হতে পারে।  

টোলোসা বলেন, ‘নারীরা আমাকে ভাড়া করতে পছন্দ করেন। কারণ, নিশ্চিত সঙ্গী না থাকলে তাঁদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতে পারে।’

টোলোসার গ্রাহকদের প্রায় সবাই বিদেশি। আবার তাঁদের বেশির ভাগ নারী ও এশীয়। বিশেষ করে চীনা ও জাপানি। তবে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের গ্রাহকও আছেন। নাচের সঙ্গী হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ ডলার করে নেন তিনি।

আগস্ট মাসে টোলোসার সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটে। কারণ, এ মাসে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে বার্ষিক ট্যাঙ্গো উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসব ছাড়াও সারা বছরই শহরটিতে বিভিন্ন সময়ে ট্যাঙ্গো নাচের অনুষ্ঠান হয়। এ ধরনের অনুষ্ঠান মিলোঙ্গা নামে পরিচিত।

টোলোসার মতো বেশির ভাগ ট্যাক্সি ড্যান্সার স্বাধীনভাবে কাজ করেন। তবে ট্যাঙ্গো ট্যাক্সি ড্যান্সারসের মতো বিভিন্ন ট্যাঙ্গো নাচের সংস্থার মূল কেন্দ্রও বুয়েনস এইরেস। ট্যাঙ্গো ট্যাক্সি ড্যান্সারস ১৭ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এ ধরনের সংস্থাগুলো নাচ শেখানোর পাশাপাশি গ্রাহককে নাচার সময় সঙ্গ দেয়।