‘জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আমাদের লেকচার দেওয়ার অধিকার আপনারা কোথায় পেলেন’
কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিমুখী আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছেন গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলী। সম্প্রতি বিবিসির সাংবাদিক স্টিফেন সাকুরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বিবিসির সাংবাদিককেও প্রশ্ন করে বসেন, তাঁকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে লেকচার দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে।
ইতিমধ্যে সাক্ষাৎকারের ওই ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।
উপকূলীয় এলাকা থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে গায়ানা। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিবিসির ওই সাংবাদিক গায়ানার প্রেসিডেন্টের কাছে ওই দেশের কার্বন নিঃসরণের হার নিয়ে জানতে চান। বলেন, তেল ও গ্যাস উত্তোলনের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ২০০ কোটি মেট্রিক টনের বেশি কার্বন নিঃসরণের আশঙ্কা আছে।
জবাবে গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলী বলেন, ‘আপনি কি জানেন, যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডকে একসঙ্গে করে যে আকার হবে, গায়ানায় সে আকারের একটি বন আছে। যে বন ১৯ দশমিক ৫ গিগাটন কার্বন শুষে নিতে পারে। সেই বনকে আমরা বাঁচিয়ে রেখেছি।’
বিবিসির সাংবাদিক তখন জানতে চান, শুধু ওই বনের জোরে গায়ানার তেল ও গ্যাস উত্তোলন এবং কার্বন নিঃসরণের অধিকার আছে কি না।
এতে চটে যান ইরফান। তিনি ওই সাংবাদিককে বলেন, ‘তো এতে কি আপনি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে লেকচার দেওয়ার অধিকার পেয়ে গেলেন? আমি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আপনাকে লেকচার দিচ্ছি, কারণ আমরা এই বনকে বাঁচিয়ে রেখেছি। ১৯ দশমিক ৫ গিগাটন কার্বন শোষণ করার যে সুফল আপনারা ভোগ করছেন, বিশ্ব ভোগ করছে, তার জন্য আপনারা আমাদের অর্থ পরিশোধ করেন না। আর এ জন্যই আপনারা এর মূল্য বোঝেন না। গায়ানার মানুষ যে এই বনকে টিকিয়ে রেখেছে, তার মূল্য আপনারা বুঝছেন না।’
ইরফান আরও বলেন, ‘ধারণা করতে পারেন, বিশ্বে আমাদেরই বন উজাড়ের হার সবচেয়ে কম। ধারণা করতে পারেন, এখন পর্যন্ত আমরা যে এত এত তেল ও গ্যাসসম্পদ আবিষ্কার করেছি, তারপরও আমাদের কার্বন নিঃসরণের নিট হার শূন্য। আমাদের সব সম্পদ আবিষ্কারের পরও তা নিট শূন্যের কোঠায় থাকবে।’
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী আচরণের সমালোচনা করেন গায়ানার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, যারা পরিবেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, তারাই এখন তাঁর দেশের (গায়ানা) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ইরফান আরও বলেন, ‘আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। কারণ, বিশ্বে যা চলছে, তা এক ভণ্ডামি। গত ৫০ বছরে বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের ৬৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা আমাদের জীববৈচিত্র্য ধরে রেখেছি। আপনি কি এর মূল্যায়ন করতে পারছেন? আপনি কি এর জন্য অর্থ পরিশোধে প্রস্তুত আছেন? উন্নত বিশ্ব কখন এর জন্য অর্থ দেবে। নাকি আপনি তাদের পক্ষের লোক? আপনি কি তাদের পক্ষে আছেন, যারা কিনা পরিবেশের ক্ষতি করেছে? আপনি কি তাদের পক্ষে? আপনি এবং আপনাদের ব্যবস্থা কি তাদের পক্ষে, যারা কি না শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং এখন আমাদের লেকচার দিচ্ছে? আপনি কি তাদের পক্ষে? তারা কি আপনাকে অর্থ দিয়েছে?’
অনেক উন্নয়নশীল দেশই এখন পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমায়।