পানামা খাল: ট্রাম্পের হুমকির মধ্যেই হস্তান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপনের উদ্যোগ পানামার

পানামা খালে চলছে পণ্যবাহী জাহাজফাইল ছবি: রয়টার্স

আন্তসাগরীয় পানামা খাল হস্তান্তরের ২৫তম বার্ষিকী আজ ৩১ ডিসেম্বর উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পানামা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ খালের নিয়ন্ত্রণ ওয়াশিংটনের কাছে ফেরত নিতে চান বলে জানান। তাঁর এ হুমকির মধ্যেই পানামা কর্তৃপক্ষ খালটি নিজের কাছে হস্তান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে চলেছে।

এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দুই দিন আগে শতবর্ষী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা যান। পানামা খালসংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেছিলেন তিনি। এ চুক্তির অধীনই ১৯৯৯ সালের আজকের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র খালটির নিয়ন্ত্রণ পানামার কাছে হস্তান্তর করে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, পানামা খাল ও এর আশপাশের প্রতি বর্গমিটার পানামার সম্পত্তি এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিয়ে দর-কষাকষি চলবে না।
হোসে রাউল মুলিনো কুইন্টেরো, পানামার প্রেসিডেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রে গত ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সম্প্রতি পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিজ দেশের কাছে ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, পানামা যদি নিরাপদ, কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য পন্থায় এ খাল পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে না পারে, তবে ওয়াশিংটন এটি নিজ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি জানাবে। তাঁর এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন পানামার বাসিন্দারা।

ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এ খাল পানামায় অবস্থিত এবং কয়েক দশক ধরে তারাই গুরুত্বপূর্ণ জলপথটি নিয়ন্ত্রণ করছে। স্বাভাবিকভাবেই পানামার সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছে।

পানামা খাল নিয়ে ট্রাম্পের আপত্তি দুটি। তাঁর মতে, খাল কর্তৃপক্ষ এটি ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যন্ত বেশি হারে মাশুল নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই খালের ওপর চীনের প্রভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে।

ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র উদার হাতে যেভাবে পানামাকে সহায়তা করছে, তারপরও দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যে হারে মাশুল নেয়, তা ‘হাস্যকর’। এ ছাড়া কোনো প্রমাণ না দিয়ে তিনি বলেন, অবৈধভাবে চীনের সেনারা এ খাল পরিচালনা করছেন।

তবে পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো কুইন্টেরো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, পানামা খাল ও এর আশপাশের প্রতি বর্গমিটার পানামার সম্পত্তি এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নিয়ে দর-কষাকষি চলবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত এ খাল ১৯১৪ সালে চালু করা হয়। এরপর ১৯৭৭ সালে দেশটি পানামার সঙ্গে একটি চুক্তি করে খালটি তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য। তবে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দুই দেশ যৌথভাবে খালটি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর এটির নিয়ন্ত্রণভার এককভাবে পানামার কাছে হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্র।

৫১ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনার ফ্রান্সিসকো সেডেনো নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকিকে ‘পুরোপুরি উদ্ভট’ বলে বর্ণনা করেন। তাঁর কথায়, ‘তাঁর উচিত প্রথমে নিজের দেশের বহুবিধ সমস্যার সমাধান করা এবং খালের ব্যাপারটি ভুলে যাওয়া।’

পানামা খাল হস্তান্তরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ এক অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন প্রেসিডেন্ট মুলিনো ও খালের প্রশাসক রিকার্তে ভাসকুয়েজ। ১৯৬৪ সালে এ খালকে কেন্দ্র করে এক ঘটনায় নিহত ২০ পানামাবাসীর স্মরণে একটি পদযাত্রা হওয়ার কথাও রয়েছে আজ।  

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, ২৫ বছর আগে খালের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এ জলপথের সক্ষমতার চেয়ে বেশি জাহাজ এটি ব্যবহার করতে শুরু করে। ২০০৭ সালে খালের বড় ধরনের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় এক দশক পর। কিন্তু খাল এলাকায় ব্যাপক খরা দেখা দেওয়ায় পানির স্তর নেমে যায়, ফলে এটি পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পানামা কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের সংখ্যা কমিয়ে দেয় এবং মাশুল বৃদ্ধি করে।

এ অতিরিক্তি মাশুলের কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প অসন্তষ্ট। তবে পানামা খালের ওপর চীন আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে—ট্রাম্পের এ দাবির কিছুটা ভিত্তি রয়েছে। ২০১৭ সালে পানামা একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষর করে, যাতে বলা হয়, তারা তাইওয়ানের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক রাখবে না। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। সেই থেকে খাল এলাকায় চীনের প্রভাব বেড়েছে।

পানামার প্রেসিডেন্ট অবশ্য বলেছেন, ‘খেয়ালখুশিমতো মাশুল নির্ধারণ করা হয়নি।’ চীন খালের ওপর প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চাইছে, এমন ধারণাও তিনি নাকচ করে দেন।

আরও পড়ুন