বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ পাখি

পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে অতি ক্ষুদ্র প্রজাতির পাখি যেমন আছে, তেমনি আছে বড়সড় আকৃতির পাখিও। কোনো কোনো পাখি তো এতটাই বড় যে এগুলোর উচ্চতা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এনবিএ) যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি। আবার কোনো কোনো পাখির ডানা এত বড় যে এগুলো কিং সাইজ খাটের সমান জায়গাজুড়ে ছড়ানো থাকে।

বিশ্বে সবচেয়ে বড় বলে বিবেচিত এমন কিছু প্রজাতির পাখির একটি তালিকা তৈরি করেছে লাইভ সায়েন্স। গত জুনে লাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইটে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়। সে তালিকা অনুযায়ী ১০টি বড় পাখির তথ্য প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

মারাবু স্টর্ক

উগান্ডার কাম্পালায় মারাবু স্টর্ক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলে এ পাখির উপস্থিতি দেখা যায়। মারাবু স্টর্ক হলো বিশ্বে স্টর্ক প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। এর উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট। ডানা সাড়ে আট ফুট পর্যন্ত ছড়ানো থাকে। মারাবু পাখির ওজন ২০ পাউন্ড বা ৯ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
মারাবু স্টর্ক মূলত মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ বা পঁচাগলা খাবার খেয়ে থাকে। এগুলোর মাথায় লোম থাকে না। ক্লিভল্যান্ড জুওলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য অনুসারে, টাক মাথা হওয়ার কারণে এ ধরনের পাখি অভিযোজনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। কারণ, এ পাখি যখন মৃত প্রাণীর শরীরের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে দেয়, তখন টাক মাথায় রক্ত লেগে থাকে না। এদের মাথায় যদি রক্ত লেগে থাকত, তবে তা এ পাখির স্বাস্থ্যের ওপর নেতাবাচক প্রভাব ফেলত।

ইমু পাখি

ইমু পাখি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

উচ্চতার দিক থেকে উটপাখির পর ইমু বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উঁচু প্রজাতির পাখি। এর উচ্চতা ৬ দশমিক ২ ফুট পর্যন্ত হয়। এটি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় পাখি। এরা উড়তে পারে না, তবে দৌঁড়াতে পারে। স্মিথসোনিয়ান’স ন্যাশনাল জু অ্যান্ড কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, ইমু পাখির পা অনেক শক্তিশালী হওয়ায় এরা ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। যথেষ্ট খাবার ও পানি পেলে এগুলো দীর্ঘপথ ভ্রমণ করতে পারে।

হারপি ঈগল

হারপি ঈগল
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

হারপি ঈগল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখিগুলোর একটি। গাঢ় ধূসর রঙের পাখিগুলো ওজনের দিক থেকে বড় ঈগল প্রজাতির। স্যান ডিয়েগো জুর হিসাব অনুসারে, একটি পরিণত স্ত্রী হারপি ঈগলের ওজন ২০ পাউন্ড বা ৯ কেজি পর্যন্ত। আর পুরুষ হারপির ওজন ১২ পাউন্ড বা ৫ দশমিক ৪ কেজি পর্যন্ত হয়। দক্ষিণ আমেরিকাজুড়ে এ ধরনের পাখির ওড়াউড়ি দেখা যায়। এরা এদের সাড়ে ৬ ফুট চওড়া ডানা মেলে শিকারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। সজারু, হরিণের মতো শিকারের দেখা পেলে ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে নিচের দিকে নেমে এসে ছোঁ মেরে ধরে ফেলে।

ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস

ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বড় ডানার পাখির কথা বিবেচনা করলে ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাখি। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেটিভ অব নেচারের (আইইউসিএন) তথ্য অনুসারে, পাখিগুলো সাধারণত সমুদ্রের ওপর দিয়ে প্রায় ১১ ফুট চওড়া ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়।
এত বড় ডানা থাকার অর্থ হলো, ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস একটা বড় সময় আকাশে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস প্রজাতির একটি পাখিকে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে দেখা গেছে।

উটপাখি

উটপাখি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

নিঃসন্দেহে আকার ও ওজন—দুই দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রজাতির পাখি হলো উটপাখি। স্যান ডিয়েগো জু ওয়াইল্ডলাইফ অ্যালায়েন্সের তথ্য অনুসারে, এসব পাখি ৯ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। ওজন হতে পারে ২৮৭ পাউন্ড বা ১৩০ কেজি পর্যন্ত। তবে ৭ ফুট পর্যন্ত চওড়া ডানা থাকার পরও এ পাখি উড়তে পারে না। নৌকা যেভাবে পাল ব্যবহার করে চলে, একইভাবে উটপাখিও এর ডানা ব্যবহার করে থাকে। উটপাখি ঘণ্টায় ৪৩ মাইল পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে।

গ্রেটার রিয়া

গ্রেটার রিয়া দেখতে কম বয়সী উটপাখির মতো। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে বিচরণকারী এ পাখির আকার একটি পরিণত উটপাখির এক–পঞ্চমাংশের মতো। তবে গ্রেটার রিয়া পাখির ওজন ৬৬ পাউন্ড বা ৩০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। স্মিথসোনিয়ান’স ন্যাশনাল জু অ্যান্ড কনজারভেশন বায়োলজি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, এগুলো পাঁচ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ পাখি উড়তে পারে না। উটপাখির মতো করে এটিও দৌড়ানোর সময় ভারসাম্য ধরে রাখতে ডানাগুলো ব্যবহার করে। হিউস্টন জুর তথ্য অনুসারে, এসব পাখি ঘণ্টায় ৪০ মাইল পর্যন্ত গতিতে দৌড়াতে পারে। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী গ্রেটার রিয়া ৪০টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।

ক্যাসোওয়ারি

ক্যাসোয়ারি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

নিউগিনি ও অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে ক্যাসোওয়ারি পাখির বিচরণ দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামের তথ্য অনুসারে, ক্যাসোওয়ারি বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পাখিগুলোর একটি। এগুলোর উচ্চতা ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
ক্যাসোয়ারির মাথার ওপর হেলমেট বা শিরস্ত্রাণের মতো একটি অংশ থাকে। এটি ঘন কেরাটিনের তৈরি। এডিনবরা জুর তথ্য অনুসারে, পাখিটি জঙ্গলের মধ্যে ছুটে চলার সময় লতাপাতা সরাতে এ শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করে। এটি যেমন একটি বড় প্রজাতির পাখি, তেমনি বিপজ্জনক পাখি প্রজাতিগুলোর একটিও। হাতে গোনা যে কয়েকটি পাখির আক্রমণে মানুষের মৃত্যু হয়, তেমনই একটি পাখি এটি।

আরও পড়ুন

ডালমেশিয়ান পেলিকান

ডালমেশিয়ান পেলিকান বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়ন্ত পাখিগুলোর একটি। এর ডানা প্রায় ১১ ফুট চওড়া হয়। এসব পাখি অনেক উঁচুতে উড়তে পারে। এসব পাখির ওড়াউড়ি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এগুলো ১০ হাজার ফুটের বেশি উঁচুতেও উড়তে সক্ষম। অ্যারিজোনা নেচার কনজারভেশন এমন তথ্য জানিয়েছে। ডালমেশিয়ান পেলিকানদের ক্ষুধাও অনেক বেশি। স্যান ডিয়েগো জু ওয়াইল্ডলাইফ অ্যালায়েন্সের তথ্য, একটি পরিণত পেলিকান দিনে প্রায় ৪ পাউন্ড বা ১ দশমিক ৮ কেজি মাছ খেতে পারে।

আরও পড়ুন

শুবিল

শুবিল হলো আফ্রিকা অঞ্চলের সবচেয়ে লম্বা পাখিগুলোর একটি। এগুলোর উচ্চতা পাঁচ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। অ্যানিমেল ডায়ভার্সিটি ওয়েবের তথ্য অনুসারে, এসব পাখি সাধারণত মিঠাপানির জলাভূমির ওপর ঘোরাফেরা করে। জলাভূমির মধ্যে থাকা মাছ ও অন্যান্য ছোট জলজ প্রাণী শিকার করে এদের সময় কাটে।
শিকারি হিসেবে শুবিল পাখির সাফল্যের হারও অনেক বেশি। চ্যারিটি বার্ড ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৬০ শতাংশ সময় এরা শিকার খোঁজার জন্য পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি করে থাকে।

আরও পড়ুন
১০

গ্রেট বাস্টার্ড

গ্রেট কাস্টার্ড ইউরোপের স্থলভাগে চলাচলকারী সবচেয়ে বড় পাখি। দ্য রয়েল সোসাইটি ফর দ্য প্রটেকশন অব বার্ডস (আরএসপিবি) মধ্য–এশিয়া অঞ্চল, রাশিয়া ও মরক্কোতে এ পাখি দেখা যায়। পুরুষ গ্রেট বাস্টার্ড পাখির ওজন ৩১ পাউন্ড বা ১৪ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এগুলো প্রায় ৪ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়। দিন দিন এ পাখির সংখ্যা কমছে। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুসারে, ১৯৬০-এর দশক থেকে বিশ্বজুড়ে এ পাখির সংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি কমেছে। কিছু দেশে এটি একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন