ভূরাজনীতি
ন্যাটো সম্মেলনে নজর বিশ্বের
বিভিন্ন কারণে এবারের সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। এতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ ও নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে জড়ো হচ্ছেন পশ্চিমা নেতারা। আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে দুই দিনের এই সম্মেলন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের এই জোটে অন্তর্ভুক্তি ঘিরে এবারের সম্মেলন আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। সম্মেলনে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ন্যাটো জোটের সদস্য হতে কিয়েভের নেওয়া পদক্ষেপের অজুহাতে গত বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ভিলনিয়াসে মঙ্গলবারের সম্মেলন থেকে এই ‘স্পষ্ট ইঙ্গিত’ দেওয়া হবে যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হলে ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে ইউক্রেন। অবশ্য জেলেনস্কির এই আশায় দৃশ্যত জল ঢেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের আগে তিনি বলেন, ন্যাটোর সদস্য হতে এখনো প্রস্তুত নয় ইউক্রেন। এ ছাড়া কিয়েভকে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা তথা গুচ্ছবোমা সরবরাহে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তিও দেখা গেছে।
এদিকে সম্মেলনের প্রাক্কালে পশ্চিমা সামরিক জোটে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ প্রদান ইউরোপের গোটা নিরাপত্তা কাঠামোর ওপর মারাত্মক নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে।
যুক্তরাজ্য সফরে বাইডেন
ন্যাটো সম্মেলনে যাওয়ার পথে যুক্তরাজ্য সফর করছেন জো বাইডেন। গতকাল সোমবার লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে তাঁকে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। মাসখানেক আগেই হোয়াইট হাউসে এই দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বিশেষ সম্পর্ক’ আরও জোরদারে আগ্রহী যুক্তরাজ্য। ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশের সময় বাইডেন বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক ‘ইস্পাতদৃঢ়’।
সুনাকের একজন মুখপাত্র বলেন, বৈঠকে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়। ইউক্রেনকে নিষিদ্ধ গুচ্ছবোমা দেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিষয়টিও এতে স্থান পায়। রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ‘এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে’ বলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
রাজা চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উইন্ডসর ক্যাসলে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বাইডেন। রাজপ্রাসাদে পৌঁছালে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান চার্লস। সেখানে তাঁকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়। বৈঠকে রাজা তৃতীয় চার্লস ও বাইডেনের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় যুক্তরাজ্যের জ্বালানি নিরাপত্তা ও জলবায়ুবিষয়ক ‘নেট জিরো’ মন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস ও জলবায়ুবিষয়ক বাইডেনের বিশেষ দূত জন কেরি উপস্থিত ছিলেন।
এরদোয়ানকে ফোন বাইডেনের
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বাইডেন। এ সময় বাইডেন আশা প্রকাশ করেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তিনি সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে দেখতে চান।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হতে একসঙ্গে আবেদন করে। তবে সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়টি তুরস্ক ও হাঙ্গেরির বিরোধিতার কারণে আটকে রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সামরিক জোটটির শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বললেন বাইডেন। দুই নেতার ফোনালাপের বিষয়টি গত রোববার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের যোগাযোগ পরিদপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যাটো সম্মেলনের ফাঁকে মুখোমুখি বৈঠকের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন বাইডেন ও এরদোয়ান।
নতুন শর্ত দিলেন এরদোয়ান
ন্যাটোর সদস্যপদে সুইডেনের আবেদন অনুমোদনে নতুন শর্ত দিয়েছেন এরদোয়ান। গতকাল তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে স্থবির হয়ে পড়া আলোচনা যদি আবার শুরু করা হয়, তাহলে তিনি ন্যাটোতে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করবেন।
ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেন, ‘প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্ককে সদস্য করার পথ উন্মুক্ত হোক। এরপর আমরা সুইডেনের জন্য পথ উন্মুক্ত করে দেব, যেভাবে ফিনল্যান্ডের জন্য পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরোনো নাম ছিল ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি। এই সংগঠনের সদস্য হতে ১৯৮৭ সালে আবেদন করেছিল তুরস্ক। পরে ১৯৯৯ সালে ইইউর সদস্যপ্রার্থী হয় দেশটি। ২০০৫ সালে সদস্যপদের জন্য আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। তবে তুরস্কের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালে এ আলোচনা বন্ধ করে দেয় ইইউ।
এরদোয়ান বলেন, ‘সদস্যপদের জন্য তুরস্ক ইইউর দরজায় ৫০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। প্রায় সব ন্যাটো সদস্যই ইইউর সদস্য। আমি এখন সেসব দেশকে বলছি, কোন কারণে তুরস্ককে ৫০ বছর ধরে অপেক্ষায় রাখা হয়েছে?’