‘হুমকির’ বিষয়ে মার্কিন দূতকে তলব ইসলামাবাদের
চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ইসলামাবাদে মার্কিন মিশনের ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধানকে তলব করেছে পাকিস্তান। চিঠিতে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষা ব্যবহার করায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ। আজ শুক্রবার জিও নিউজ এসব কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘হুমকির চিঠির’ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির (এনএসসি) বৈঠক হয়। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হুমকির চিঠির’ বিষয়ে কূটনৈতিকভাবে কড়া প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নিল ইসলামাবাদ।
ইসলামাবাদের মার্কিন কূটনীতিককে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানানোর আগে ‘হুমকির চিঠির’ বিষয়টি পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ও কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ইমরান। এই ভাষণে চিঠির বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি ‘মুখ ফসকে’ যুক্তরাষ্ট্রের নাম বলে দেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তা তিনি শুধরে নেন। পরে বলেন, একটি বিদেশি রাষ্ট্র হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে, যা পাকিস্তানবিরোধী।
ভাষণে ইমরান আরও বলেন, তিনি কোনোভাবেই পদত্যাগ করবেন না। চলমান ষড়যন্ত্রকে কখনো সফল হতে দেবেন না।
গতকাল গভীর রাতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হুমকির চিঠির বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলে উপযুক্ত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, হুমকির চিঠিতে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত ভাষা ব্যবহার করায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ। মার্কিন দূতকে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা শুরু করে। এ হামলার মধ্যেই মস্কো সফর করেছিলেন ইমরান। এ প্রসঙ্গে ভাষণে ইমরান বলেন, ‘...তারা কেন হুমকি দিচ্ছে, তার কোনো কারণ দেখাচ্ছে না। তারা শুধু বলছে, ইমরান খান রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। তারা এই একটা বিষয়কে ইস্যু করে হুমকি দিচ্ছে। অথচ এই সিদ্ধান্ত আমি একা নিইনি। এ বিষয়ে তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছিল।’
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর গতকালও বিতর্ক শুরু হয়নি। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর কয়েক মিনিটের মাথায় তা আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার। সেদিনই জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হতে পারে। তবে বিরোধীরা গতকালই এই ভোটাভুটির দাবি জানিয়েছিলেন।
জাতীয় পরিষদে মোট আসন ৩৪২টি। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন। জিও নিউজের হিসাব অনুযায়ী, বিরোধী জোটের হাতে রয়েছে ১৯৯টি ভোট। অন্যদিকে ইমরানের পক্ষে আছে ১৪২টি ভোট।
জাতীয় পরিষদে আনা বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রীর বিদায় নিতে হতে পারে। এর আগে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে দুইবার অনাস্থা ভোট হয়েছিল। শওকত আজিজ ও বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে আনা সেই অনাস্থা ভোটে দুজনই বেঁচে গিয়েছিলেন।
পাকিস্তানে স্বাধীনতার পর দেশটির কোনো সরকার তার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরানের ভাগ্যেও তেমনটা ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।